যেসব আমলে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত হবে
ছবি সংগৃহিত
জান্নাত শব্দটি আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের নিজস্ব একটি পরিভাষা। পারিভাষিক অর্থে জান্নাত বলতে এমন স্থানকে বোঝায়, যা আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন তাঁর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট করে রেখেছেন। যা দিগন্ত বিস্তৃত নানা রকম ফুলে ফলে সুশোভিত সুরম্য অট্টালিকা সম্বলিত মনোমুগ্ধকর বাগান; যার পাশ দিয়ে প্রবাহমান বিভিন্ন ধরনের নদী-নালা ও ঝর্ণাধারা। যেখানে চির বসন্ত বিরাজমান।
আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করে জান্নাতে যাওয়ার অনেক পন্থা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে যাওয়ার পথটি আমাদের জন্য সহজ করে দিয়েছেন। কিন্তু দুনিয়াবি ব্যস্ততার মধ্যে ডুবে থেকে মাঝে মাঝে আমরা এই সহজ পথটিও ভুলে যাই।
ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে আর বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল তার জন্য বেহেশতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা করে প্রবেশ করবে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৪৮)
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুসারে জান্নাতের দরজা আটটি। অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ (সা.) কয়েকটি আমলকে জান্নাতের দরজা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জান্নাতের দরজাতুল্য হওয়ার অর্থ-
আল্লাহ তাআলা মুমিনের আমল অনুসারে তাকে জান্নাত দান করবেন। আবার বিশেষ বিশেষ আমলের জন্য আল্লাহ বিশেষ বিশেষ জান্নাত দান করবেন।
আল্লাহ যে আমলের জন্য যে জান্নাত দান করবেন, সে আমলটা সেই জান্নাতের জন্য দরজাস্বরূপ। কেননা সেই আমলের মাধ্যমেই জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত হবে। যেমন নামাজের ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নামাজ জান্নাতের চাবি আর নামাজের চাবি অজু।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৪)
হাদিসে আটটি আমলকে জান্নাতের দরজা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তা হলো, মা-বাবার আনুগত্য, আল্লাহর জিকির ও তাওবা।
১. ঈমান : আল্লাহ ও তাঁর নবীর প্রতি ঈমান আনবে এবং দ্বিন ইসলামের অনুসরণ করবে, আল্লাহ তাদের সাধারণভাবেই জান্নাত দান করবেন। ঈমানহারা ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুহাম্মদ, আপনার উম্মতের মধ্যে যাদের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না, তাদের জান্নাতের দরজাগুলোর ডান পাশের দরজা দিয়ে প্রবেশ করিয়ে দিন। এ দরজা ছাড়া অন্যদের সঙ্গে অন্য দরজায়ও তাদের প্রবেশাধিকার থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৭১২)
২. নামাজ : ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল নামাজ। জান্নাতে নামাজ নামে একটি দরজা থাকবে। যে ব্যক্তি যথাযথভাবে নামাজ পড়বে তাকে সে দরজা দিয়ে প্রবেশের আহ্বান করা হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(জান্নাতের একাধিক দরজা রয়েছে) যে ব্যক্তি নামাজ আদায় করবে তাকে নামাজের দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য আহ্বান করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৬)
৩. আল্লাহর পথে সংগ্রাম : আল্লাহর পথে সংগ্রাম ইসলামী রাষ্ট্র ও মুসলিম জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই সামরিক ব্যবস্থা গ্রহণের দায়িত্ব ইসলামী রাষ্ট্রের। জান্নাতের একটি দরজার নাম হবে ‘বাবুল জিহাদ’। যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে তাদের এই দরজা দিয়ে আহ্বান জানানো হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা আল্লাহর পথে সংগ্রাম করবে তাদের বাবুল জিহাদ দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের আহ্বান জানানো হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৬)
৪. রোজা : সিয়াম বা রোজা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ এবং আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয় আমল। আল্লাহ রোজা পালনকারীকে জান্নাতের বিশেষ দরজা দিয়ে প্রবেশ করাবেন। সে দরজার নাম হবে রাইয়ান। মহানবী (সা.) বলেন, যারা রোজা পালন করবে তাদের রাইয়ান দিয়ে জান্নাতে প্রবেশের আহ্বান জানানো হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৬)
৫. সদকা : দান-সদকার মাধ্যমে অসহায় মানুষের বিপদ দূর হয়। এ জন্য আল্লাহ দানকারীর বিপদ দূর করে দেন। জান্নাতে ‘সদকা’ নামে একটি বিশেষ দরজা থাকবে। নিয়মিত দান-সদকাকারীরা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। রাসুলুল্লাহ বলেন, ‘দানকারীদের সদকা নামক দরজা দিয়ে প্রবেশের আহ্বান জানানো হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৬৬৬)
৬. মা-বাবার আনুগত্য : মা-বাবা সন্তানের জন্য জান্নাত লাভের মাধ্যম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাবাকে জান্নাতের মধ্যবর্তী তথা সর্বোত্তম দরজা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছা করলে এটা ভেঙে ফেলতে পারো অথবা এর রক্ষণাবেক্ষণও করতে পারো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯০০)
৭. জিকির : আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। কায়েস বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নামাজ পড়ছিলাম এমন অবস্থায় নবী (সা.) আমার কাছ দিয়ে গমন করলেন। তিনি নিজের পা দিয়ে আমাকে আঘাত (ইশারা) করে বললেন, আমি তোমাকে কি জান্নাতের দরজাগুলোর একটি দরজা সম্পর্কে জানাব না? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ (আল্লাহ ছাড়া অনিষ্ট দূর করার এবং কল্যাণ লাভের কোনো শক্তি কারো নেই)। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৮১)
৮. তাওবা : তাওবা বা অনুপাতের সঙ্গে গুনাহ ত্যাগ বান্দার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের দরজা আটটি। সাতটি বন্ধ আছে। একটি দরজা তাওবাকারীর জন্য খোলা রয়েছে যত দিন সূর্য পূর্বদিক থেকে উদিত হবে।’ (মুস্তাদরিকে হাকিম, হাদিস : ৭৭৪৫)।
জান্নাতের ব্যাপক পরিচিতি সম্পর্কে সংক্ষেপে এক বর্ণনায় মহান আল্লাহ বলেছেন, কেউ জানে না তার জন্য কৃতকর্মের কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে। (সূরা সাজদাহ: ১৭)
আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন এরশাদ করেন, আমি আমার নেক বান্দাদের জন্য এমন নেয়ামত তৈরি করে রেখেছি, যা কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শোনে নি এবং এমনকি কোনো মানুষ তা কল্পনাও করতে পারে না। এরপর তিনি বলেন, যদি তোমরা চাও, তাহলে নিম্নোক্ত আয়াতটি পড়ো। যার অর্থ হলো: “কেউ জানে না, তার জন্য কি কি নয়নাভিরাম বিনিময় লুকায়িত আছে।” (বুখারী, ৩২৪৪; মুসলিম, ২৮২৪)
আল্লাহ তাআলা সবাইকে নেক আমল করার তাওফিক দিন করুন। আমিন