মাসব্যাপী রোজার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি
একজন মুসলিম মহা মর্যাদাপূর্ণ মাহে রমজানের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেন। দিন গুণতে থাকেন- কবে আসবে মাহে রমজান? কবে থেকে রোজা রাখবেন? অতপর দিন গণনা শুরু করুন আর মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকুন-
“হে আল্লাহ! শাবান মাসে আমাদের বরকত দান কর আর আমাদের পৌঁছে দাও রমজান মাসে।” সিয়াম পালনে পরিবারের সদস্যদের মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। আপনার নিজের মানসিক প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে আপনার পরিবারের সদস্যদের, নিকটাত্মীয়দের ও অধীনস্থদেরও মাহে রমজানকে স্বাগত জানানোর এবং পুরো মাস সিয়াম পালনের জন্যে মানসিকভাবে সচেতন ও প্রস্তুত করতে থাকুন। প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। রমজান শুরু হওয়ার আগেই এ মাসের জন্য অর্থনৈতিক প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। কয়েকটি কারণে এ মাসে একজন মুসলিমের ব্যয় বেড়ে যায়। যেমন:
১. রোজাদারদের ইফতার করানোর কারণে।
২. বেশি বেশি দান-সদকা করার কারণে।
৩. মজুতদার ও অসৎ ব্যবসায়ীদের দ্বারা দ্রব্যসামগ্রির মূল্য বৃদ্ধির কারণে
৪. অনেকেই এ মাসে বার্ষিক জাকাত প্রদান করেন।
৫. ঈদুল ফিতর উদযাপনকে সামনে রেখে।
৬. ফিতরা আদায়ের কারণে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে আমরা সিয়াম নিয়েছি এবং কুরআন বাদ দিয়েছি। এজন্য প্রকৃত ও পরিপূর্ণ তাকওয়া অর্জন করতে পারছি না। আল্লাহ বলেছেন: “রামাদান মাস। এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে সিয়াম পালন করে।”১ (সূরা বাকারা: ১৮৫ আয়াত)
এভাবে আমরা দেখছি যে, মহান আল্লাহ কুরআনের সঙ্গে সিয়ামকে জড়িত করেছেন। হাদিস থেকে জানা যায় যে, দুভাবে এ সংশ্লিষ্টতা। প্রথমত রমজানে রাত-দিন কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দ্বিতীয়ত রাতে কিয়ামুল্লাইল বা তারাবিহের সালাতে কুরআন পড়া বা শুনা।
মুমিনের অন্যতম ইবাদত কুরআন তিলাওয়াত করা। আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ যিকির কুরআন তিলাওয়াত। কুরআন কারিমের একটি আয়াত শিক্ষা করা ১০০ রাকাত নফল সালাতের চেয়েও উত্তম বলে হাদিস শরিফে বলা হয়েছে। সারা বছরই তিলাওয়াত করতে হবে। বিশেষত রমজানে বেশি তিলাওয়াত করা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বিশেষ সুন্নাত, যাতে অতিরিক্ত সাওয়াব ও বরকত রয়েছে।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, আমাদের মধ্যে উপস্থিত অনেক মুসল্লিই কুরআন পড়তে পারেন না। যদি দুনিয়ার কোনো মন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতি আপনাকে একটি চিঠি পাঠান তা পড়তে ও বুঝতে আপনি কত ব্যস্ত হন। আর রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তার হাবিব মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমে আপনাকে এ কিতাবটি পাঠালেন, আর আপনি একটু পড়ে দেখলেন না। আল্লাহর কাছে গিয়ে কী জবাব দেবেন? যে কিতাব পাঠ করে এখনো হাজার হাজার কাফির মুসলিম হচ্ছে, আপনি মুসলিম হয়ে সে কিতাবটা পড়লেন না। অনেক নও-মুসলিম আছেন যারা মুসলিম হওয়ার পরে ৩/৪ বৎসরের ভেতরে কুরআন তিলাওয়াত ও অর্থ বুঝার যোগ্যতা অর্জন করেন। আর আমরা জন্ম থেকে মুসলমান আমরা অনেকেই কুরআন পড়তে পারি না। আমরা সংবাদ শুনে, পড়ে, সংবাদ পর্যালোচনা করে, অকারণ গিবত করে, বাজে গালগল্প করে কত সময় নষ্ট করি। অথচ আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত শেখার সময় হয় না। কুরআন তিলাওয়াত শিখতে বেশি সময় লাগে না। নূরানি পদ্ধতি, নাদিয়া পদ্ধতি বিভিন্ন আধুনকি পদ্ধতিতে মাত্র ৩/৪ মাস পড়লেই বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত শেখা যায়। আসুন, আমরা কুরআনের মাস রমজান উপলক্ষে কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা করি।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে থেকে যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করে ও শিক্ষা দান করে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি।”২ (সহিহ বুখারি ৪/১৯১৯)
“যে ব্যক্তি কুরআনের একটি বর্ণ পাঠ করবে সে একটি পুণ্য বা নেকি অর্জন করবে। পুণ্য বা নেকিকে দশগুণ বৃদ্ধি করে প্রদান করা হবে।”৩ (তিরমিযি ৫/১৭৫, নং ২৯১০। হাদিসটি সহিহ) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে সুপারদর্শী সে সম্মানিত ফেরেশতাদের সঙ্গে। আর কুরআন তিলাওয়াত করতে যার জিহ্বা জড়িয়ে যায়, উচ্চারণে কষ্ট করে অপারগতা সত্ত্বেও সে তিলাওয়াত করে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। ”১ (সহিহ বুখারি ৬/২৭৪৩, সহিহ মুসলিম ১/৫৪৯)
অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “তোমরা কুরআন পাঠ করবে; কারণ কুরআন কিয়ামতের দিন তার সঙ্গীদের (কুরআন পাঠকারীগণের) জন্য শাফা’আত করবে।”২ (সহিহ মুসলিম ১/৫৫৩)
অবএব শাবান শেষে রমজানের চাঁদ দেখুন। একা একা দেখুন, দলবেঁধে দেখুন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ।’ তাই রমজানের চাঁদ দেখুন। এভাবে চাঁদ দেখার মাধ্যমে মাহে রমজানকে স্বাগত জানান এবং পুরো মাস রোজা রাখার তৌফিক চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
ড. মাহবুবা রহমান: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, লালমাটিয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ঢাকা
এসএন