আত্মসমালোচনায় লাভ, পরনিন্দায় ক্ষতি
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয়গুলো জানেন।’ (সুরা মুমিন: ১৯) কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর কাছে আসমান ও জমিনে কোনো কিছু গোপন থাকে না।’ (সুরা আল-ইমরান: ০৫)
এই দুই আয়াতে আল্লাহ তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন। সে সঙ্গে মানুষদের গর্ব-অহঙ্কার থেকে বিরত থাকার ব্যাপারেও সতর্ক করেন। মানুষের জন্য অহঙ্কার ও হিংসা করা উচিত নয়। প্রতিটি মানুষের মধ্যেই কিছু না কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। তাই অন্যের সমালোচনা করার আগে নিজের মুখটা আত্মসমালোচনার আয়নায় দেখে নেওয়া উচিত।
তিরমিজি শরিফের এক হাদিসে আছে, হজরত আবু ইয়ালা শাদ্দাদ ইবনে আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে তার নফসের হিসাব নেয় এবং পরকালের জন্য কাজ করে। আর নির্বোধ ওই ব্যক্তি, যে নিজের নফসের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে আবার আল্লাহর কাছেও আশা-আকাক্সক্ষা করে।’ (তিরমিজি: ২৪৬৯)
অন্যের সমালোচনা করা, দোষত্রুটি খুঁজে বের করা নিজের কুপ্রবৃত্তিরই কাজ। হাদিসে তাদের নির্বোধ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত (সৃষ্টির সেরা) বলে পবিত্র কোরআনে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বস্তুত সৃষ্টির সেরা ওই মানুষ, যে আপন নফসের সার্বক্ষণিক হিসাব নেয় এবং নফসকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখে। তার মাধ্যমে নফস পরিচালিত হয়। সে নফসের দ্বারা পরিচালিত হয় না। মন যা চায় তা-ই করা নির্বুদ্ধিতার শামিল। নফস প্রতিনিয়ত মানুষকে খারাপ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে। তবে যে নফসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেই সফল। তবে এর জন্য প্রয়োজন দৃঢ়তা। সর্বদা ভালো কাজের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা।
প্রতিটি মানুষ যদি অন্যের হিসাব নেওয়ার আগে নিজের হিসাব নিত তা হলে পৃথিবী থেকে অশান্তি দূর হয়ে যেত এবং শান্তির হাওয়া প্রবাহিত হতো। বিশ্বে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা অন্যের সমালোচনায় বড় পারদর্শী। অথচ নিজের ভেতর কত সমস্যা বিদ্যমান, সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
অন্যের গীবত-শেকায়েতের পেছনে মূল্যবান সময় নষ্ট না করে ইহকাল ও পরকাল সুন্দর করার চেষ্টা করা উচিত। আর এ ক্ষেত্রে দীনি দায়িত্বগুলো সঠিকভাবে আদায় করাটাই মুখ্য।
এসএ/