জনবান্ধব পুলিশে রূপান্তরিত হোক বাংলাদেশ পুলিশ
পুলিশ জনগণের বন্ধু। এমন স্লোগান দীর্ঘদিন থেকে শুনে আসছি। গতকাল একটি টেলিফোনের মাধ্যমে তার কিছুটা আচ করা গেছে। কিন্তু এটা সবক্ষেত্রে হলে ভালো হতো বলে আমি মনে করি।
বিস্তারিত ঘটনা হলো-আমাকে দেখিয়ে দিনে এমন কথা বলে গত ২৮ মার্চ জনৈক অপরিচিত ব্যক্তি ফোনে হুমকি দিয়েছিল। এ বিষয়ে ২৯ মার্চ, অনেকের পরামর্শে যাত্রাবাড়ি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছিলাম।
পরবর্তী সময়ে আমার সাধারণ ডায়রির জন্য নির্ধারিত তদন্ত কর্মকর্তা ফোন রেকর্ড চাইলে আমি তাকে ফোনকলের রেকর্ড সরবরাহ করলেও এ বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি আজ ২ মে পর্যন্ত দেখছি না। তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা বলা ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখার নির্দেশ দিলেও এ বিষয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তা জানতে পারিনি। এমনকি পুলিশের মনিটরিং সেল থেকেও কোনো ফোন করে কিছু জানতে চায়নি।
অপরদিকে, আমার পাসপোর্ট হারানোর বিষয়ে বাসায় বসে অনলাইনে একটি সাধারণ ডায়েরির আবেদন করেছিলাম। সেটি গ্রহণ না হওয়ায় আবারও অনলাইনে আবেদন করেছিলাম কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছিল না।
তখন পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি সাধারণ ডায়েরির ট্র্যাকিং নম্বর পৃথকভাবে দিয়ে আমাকে ডেমরা থানায় যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী আমি ২৭ এপ্রিল ২০২২ ডেমরা থানায় ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় উপস্থিত হই। তখন ডিউটি অফিসার বলেন বিদ্যুৎ না আসা পর্যন্ত কিছুই করা যাবে না।
আপনি অন্য জায়গায় অপেক্ষা করুন। ঘণ্টার অধিক সময় অপেক্ষা শেষে বিদ্যুৎ এলে আমার কাজের বিষয়ে চূড়ান্ত করতে ডিউটি অফিসারকে অনুরোধ করলে তিনি টেকনিক্যাল সমস্যা সমাধান ও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় নেওয়া সাধারণ ডায়রি সফটওয়্যার এ আপডেট না দিয়ে আমার কাজটি করা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়।
তখন আমি আর একটু অনুরোধ করলে আমাকে থানার আইটি কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। আইটি কর্মকর্তা আমার ট্র্যাকিং নম্বর চেক করে বলেন, আমার জিডির আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
কারণ বিশ্লেষণ করে দেখা গেল অনলাইন জিডি নামে যে অ্যাপ করা হয়েছে সেটা এ থানা এলাকার সব স্থানের নাম সংযুক্ত না থাকায় তথ্য মেলেনি তাই ২য় বারেও আমার অনলাইন জিডির আবেদন বাতিল করা হয়েছে।
তৃতীয় পর্যায়ে থানায় বসেই আবার নতুন করে সফটওয়্যার এ বর্ণিত স্থান দিয়ে আবেদন করলে সফলতা আসার সম্ভাবনা দেখা যায়। কিন্তু বিদ্যুতের অনুপস্থিতি ও সার্ভার দুর্বল থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্বেও আমার কাজটি দ্রুত করতে পারেননি। এমনকি ভালো একটি কিবোর্ড ছিল না ডেমরা থানার ডিউটি অফিসারের কাজের জন্য।
একপর্যায়ে লক্কর ঝক্কর কিবোর্ড দিয়ে রাত ১০টায় আমার সাধারণ ডায়রির আবেদন গ্রহণ করে ডায়রি নম্বর দেওয়া হয়। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ডিউটি অফিসার এর ডিউটি শেষ হবার কথা ছিল রাত ৮টায়, সেই ডিউটি অফিসার এর ডিউটি শেষ হয়েছে রাত ১০টায়। পুলিশ স্টেশনের এমন দুরবস্থা হলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে তারা কীভাবে কাজ করবেন? এটাই আমার প্রশ্ন।
১ মে আমার মোবাইল এ একটি ফোন এলো বাংলাদেশ পুলিশ থেকে। আমার নাম ঠিক আছে কি না জানতে চেয়ে প্রশ্ন করা হলো জিডি করতে গিয়ে আমি কি কোনো হয়রানির শিকার হয়েছি? জবাব দিলাম না। পুলিশকে কোনো অর্থ দাবি করেছে? বললাম না। জানতে চাইলো আমার কোনো অভিযোগ আছে? তখন বলেছি, পুলিশ স্টেশনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকার পাশাপাশি সার্ভারের দুর্বলতা দূর করে ভালো সার্ভারের ব্যবস্থা করা জরুরি।
উপসংহারে বলতে হচ্ছে, যাত্রাবাড়ী থানায় করা সাধারণ ডায়রির ফলোআপ আশা করছিলাম। কিন্তু কোনো তৎপরতা দেখছি না। আর ডেমরা থানা পাসপোর্ট হারানোর বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি করার ক্ষেত্রে যে সমস্যা দেখেছি আশা করি সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ জনস্বার্থে এ বিষয়গুলো সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে ফোন দিয়ে যে অভিযোগ জানতে চাওয়া হয়েছে এজন্য বাংলাদেশ পুলিশকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানাচ্ছি।
আশা করি বাংলাদেশ পুলিশ আাগামী দিনগুলোতে জনবান্ধব পুলিশে রূপান্তরিত হবে এবং সাধারণ মানুষের পরিপূর্ণ আস্থা ফিরিয়ে এনে প্রকৃতপক্ষে জনগণের বন্ধু হবে।
এমএমএ/