রসময় ভট্টাচার্য্যর কবিতা ‘রক্তাক্ত আহত বাংলাদেশ’
আমি আজ সেই রক্তাক্ত মানুষটির কথা বলতে আসিনি।
আমি ভূলুণ্ঠিত মানবতার কথা বলতে এসেছি।
রাতের আঁধারে একটি শকুন মগডালে বসে চিৎকার করে বলছিল, 'হে মানুষ তোমরা পশুত্ব বরণ করে চলেছো,
তোমাদের কূল রক্ষা করো।'
আমি সেই শকুনের কথা বলতে এসেছি।
চেতনায় উজ্জীবিত বইমেলার কোলাহল থেকে অশরীরী কেউ হঠাৎ হাহাকার করে বলেছিল, 'তোমরা পেছনের দিকে
হাঁটতে চলেছো,দেখো হায়েনারা কেমন খাবলে খাচ্ছে তোমাদের।'
আমি সেই অশরীরীর কথা বলে এসেছি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশদিয়ে বয়ে চলা রাজ পথ সেদিন আমাকে আক্ষেপ করে বলেছিল,' হুমায়ুন আজাদকে
হাসপাতালে নিয়ে কী লাভ হবে বলো, গোটা দেশটাই আজ যেখানে আহত রক্তাক্ত। খুন ঝরছে প্রতিটি ধুলি কণার।'
আমি সেই পথের কথা পূণরাবৃতি করতে এসেছি।
রক্তমাখা ধুলিকণারা সেদিন আর্তনাদ করে আমাকে বলেছিল, ' তোমরা বিশ্বাস ঘাতক,রাষ্ট্রবিরোধীদের সাথেও
আপোষ করো গদির লোভে।'
আমি সেই আর্তনাদের কথাবলতে এসেছি।
সেদিনের সে কালো রাত, একুশের বইমেলার নিকষ ভূতূড়ে রজনী গগন বিদীর্ণ চিৎকারে করে রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে
আমাকে বলেছিল,' হে বঙ জননী সাত কোটি সন্তানেরে তুমি রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।'
আমি সেদিনের সে রাতের রবীন্দ্র কণ্ঠধ্বনি তোমাদের শোনাতে এসেছি।
রক্তাক্ত হুমায়ুন আজাদের কথা বলতে আসিনি।
সেদিনের সেই আহত বাংলার আকাশ আমায় অভয় দিয়ে বলেছিল, 'এক হুমায়ুন আজাদ চলে গেলে লক্ষ হুমায়ুন
আজাদ জন্ম নেবে তাঁর রক্তের প্রতিটি ফোঁটা থেকে, তাই আমি আজ রক্তপলাশরাঙা আজাদের কথা বলতে আসিনি।
আমি এসেছি আজ আমাদের মুখ থুবড়ে পড়া রক্তাক্ত আহত বাংলায় চেতনার ফিনকি ছড়াতে।
এসেছি পোকা ধরা পাঁজরের কীট গুলোকে বুটের তলায় পিষে দিতে।
এসেছি রক্তে ভেজা ঐতিহ্যের নিভু নিভু সলতে আজাদ প্রদীপ জ্বেলে দিতে।
কারও করুণা নিতে আসিনি। এসেছি মুক্তির পতাকা উড়িয়ে দিতে, যে পতাকা উড়বে অনাদিকাল...
(হুমায়ুন আজাদ স্মরণে)
ডিএসএস/