আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিদ্যুৎ খাতকে কেন্দ্র করে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত সরবরাহ আইন (কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট আইন) প্রণয়ন করে দায়মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই খাতে লুটপাটের মডেল তৈরি হয়। গত ১৫ বছরে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনায় ঘুষ, কমিশন, এবং অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতার কারণে জনগণের ওপর ৭২ হাজার কোটি টাকার বোঝা চাপানো হয়েছে।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ৫,৭০০ মেগাওয়াট থেকে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩২,০০০ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। এ সময়ে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকল্প দ্রুত সরবরাহ আইনের আওতায় অনুমোদন পাওয়ায় উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার সুযোগ বন্ধ ছিল।
বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে ৩০ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার দুর্নীতির মাধ্যমে লুট হয়েছে।
মহাপরিকল্পনায় ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ৩০,০০০ মেগাওয়াট ধরা হলেও, পরে এই লক্ষ্যমাত্রা ৪০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করায় অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত সক্ষমতার জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বাবদ প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার অপচয় হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেছেন, “উচ্চমাত্রার লক্ষ্য নির্ধারণ করে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এর ফলে জনগণের কাঁধে ভাড়া ও অন্যান্য ব্যয়ের বোঝা চেপেছে।”
শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন নির্মাণ এবং মিটার কেনাকাটায় বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। তবে এসব খাতে দুর্নীতির বিস্তারিত চিত্র এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, বিদ্যুৎ খাতে এ ধরনের দুর্নীতি অর্থনীতিতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। সরকারের উচ্চাভিলাষী প্রকল্পের ফলে জনগণকে অযৌক্তিকভাবে অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়েছে।
প্রস্তাবিত সমাধান:
- বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি কমাতে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে প্রকল্প অনুমোদন।
- দায়মুক্তি আইন বাতিল করে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
- শ্বেতপত্রে বিস্তারিত তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ।
- অপ্রয়োজনীয় সক্ষমতা বন্ধ এবং বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ।
বিদ্যুৎ খাতের এই সংকট উত্তরণে জনসাধারণ, বিশেষজ্ঞ এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।