বিধান চন্দ্র রায় এর কবিতা বাসভূমে
আমাদের বাড়ীতে এলে মনে হবে রাজা রামমোহনের
জামানায় চলে এসেছো তুমি
শতাব্দী প্রাচীন আমাদের বাসভূমে এসে হতভম্ব হয়ে যাবে!
দীর্ঘ গাছ গাছালীতে ভরা তপোবন বলেও ভ্রম হতে পারে –
এখনো আমাদের বাড়ীতে ঢুকতে হলে দরোজার শিকলে,
লোহার গোল গোল কড়ায় হাত রাখতে হবে তোমাকে
-
এখনো আমরা পাতকুয়ার হীম-শীতল জলে শরীর জুড়াই
চাইলে তোমাকে পান করতে দেব মাটির সরুয়ে রাখা জল
এখনো মেঝেতে, জোড়া আসনে বসে সম্পন্ন করতে হয় আহারাদি, কলার পাতায়
-
এখনো কোন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান হলে সমবেত হয় মানুষ জন,
আত্মীয় স্বজন পাড়া প্রতিবেশী আমাদের বাড়ির ভিতর আঙিনায়
আপ্যায়নের জন্য, ডেকরেটারের চেয়ার টেবিল আসে
প্যান্ডেল বাঁধা হয়, প্রবেশ দরোজায় থাকে বাহারি তোরণ
-
এখনো রান্না ঘরে শিল পাটার শব্দের সাথে বেজে ওঠে কাঁকনের ধ্বনি
হামান দিস্তায় মশলা পেশার শব্দ ওঠে থেকে থেকে
পাটায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ডাল ভাঙ্গার দৃশ্য চোখে পড়তেও পারে
খড়ির উনুনে বড়ো বড়ো ডেগে ফোটে রসুইয়ের জল
এখনো প্রতিদিন প্রত্যুষে ঝাঁঝরার জলে স্নান করে বাগানের ফুল ও সদ্য অঙ্কুরিত ফলের চারা গাছ
এখনো সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বলে তুলসী বেদীতে,
সেই সাথে শঙ্খ কাঁসর ঘন্টার ধ্বনি বেজে ওঠে
ধূপ ধূঁয়ার গন্ধে আমোদিত হয় চারিদিক
-
কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষে একত্রিত হলে পাটি পেতে এখনো লুডু,কেরামের বোর্ড ঘিরে গোল হয়ে বসে জমে ওঠে খেলার আসর,
ঘুঁটি খাওয়া খায়ি নিয়ে হাত সাফাই চলে,চলে খুঁনসুটি
শীতের দিনে ব্যাডমিন্টনের আসর বসে,বাহির আঙিনায়
নীলাব্জ পুস্করিণীর ঘাটে বসে চলে হৈ হুল্লোর
-
আমি সঠিক বলছি কিনা জিজ্ঞেস করতে পারো
গবেষক ড.আশরাফ সিদ্দিকীকে, সুহৃদ ড.তসিকুল ইসলাম রাজাকে, সঙ্গীত সংগঠক ড.সানজিদা খাতুনকে, সাংবাদিক কবি আবদুর রশীদ চৌধুরী কে –
এঁরা ঘুরে গেছেন,আমাদের বাড়ি, কারো কারো আছে
রাত্রি যাপনের অভিজ্ঞতা
এ বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক খ্যাতিমান মানুষের
গল্প গাঁথা
-
তোমার জন্যও আমন্ত্রণ রইলো, একবার এসে ঘুরে যেও
মাটি ও মানুষের স্বাদ পেতে ঘুরে যেও তুমি
কলার পাতায় বেড়ে দেব মিষ্টান্ন, সবজি খিচুড়ি,
বেগুনের ভাজা, মাটির খুরিতে দেব জল
এসো তুমি নির্দিধায় আদি ও অকৃত্রিম কুষ্টিয়া শহরে,
কোর্টপাড়ায় লক্ষ্মীকুটিরে।
ডিএসএস/