জাবিয়ান চড়ুইভাতি!
কয়েকদিন ধরে আবহাওয়া খুব ভালো না। মেঘলা আকাশ, কখনো কখনো টিপ টিপ বৃষ্টি পড়ছে। এর মধ্যে ১২ জানুয়ারি ৫১ বছরে পা দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ফেসবুক ভেসে যাচ্ছে শুভেচ্ছাতে।
জাবির ৫১ বছর পূর্তির দিনে কি করা যায় এটা নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরে ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অর্থনীতির ৩১ ব্যাচের শাহিন ভাইকে ফোন করে ভাবনার কথা জানালাম। তিনি আমার পরিকল্পনা শুনে একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে কথা বললেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে মহেশপুর, কোটচাঁদপুর, জীবননগর ও দর্শনায় কর্মরত বেশ কয়েকজন জাবিয়ানের সঙ্গে কথা বললাম। সাবাই রাজি। প্রগ্রামের প্রতি আগ্রহ দেখে আমি চলে গেলাম কোটচাঁদপুর সোনালী ব্যাংকে কর্মরত বিপ্লবের অফিসে। কিছুক্ষণ পর যোগ হলো ৩৫ ব্যাচের পারভেজ। মোটামুটি একটা ড্রাফ্ট তৈরি করে রওনা হলাম ৩২ ব্যাচের শিমুর বাসায়। আমরা তার বাসায় জাবিয়ান আড্ডার মাঝেই অংশগ্রহণকারী সদস্যের সংখ্যা ও খাবারের ম্যানু তৈরি করলাম। রাতে বাড়ি ফিরে ৩৫ ব্যাচের জনিকে বিস্তারিত জানাতেই তিনি আরো কিছু নতুন আইডিয়া দিলেন। পরদিন ছুটে গেলাম ৩১ ব্যাচের জীবননগর শাখার একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যানেজার সোহেলের কাছে। কথা বললাম দর্শনার কেরু এন্ড কোম্পানির ডেপুটি ডিরেক্টর হালিমের সঙ্গে। সবার উৎসাহ পেয়ে মনে সাহস পেলাম। রাতে কোটচাঁদপুরের ইউএনও ৩৬ ব্যাচের দেলোয়ার ভাইয়ার সঙ্গে প্রগ্রাম নিয়ে বিস্তারিত কথা হলো। সবার সম্মতিক্রমে স্থান নির্বাচিত হলো বলুহর মৎস্য প্রজেক্ট, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ। দেশের বৃহত্তম এই মৎস্য প্রজেক্টটি কোটচাঁদপুর শহরের অদূরেই অবস্থিত। পাশেই বাওড়। মনোরম পরিবেশে জাবিয়ান চড়ুইভাতি ভালোই জম্বে। এটা ভেবে কয়েক দিন স্বপ্নের ভিতরেই ছিলাম।
এদিকে প্রগ্রামের দিন সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। একটু ভাবনায় পড়ে গেলাম কিন্তু শাহিন ভাইয়ার কথায় সাহস পেয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু করলাম। আগের দিন সব কেনাকাটা করে রেখেছিলাম। ওই দিন শুধু কেক আর ফুল কিনে শাহিন ভাইয়ার গাড়িতে রওনা হলাম প্রোজেক্টের পথে। বলে রাখি, শাহিন ঢাকা থেকেই সবসময় যোগাযোগ রাখছিলেন এবং রান্না থেকে শুরু করে চড়ুইভাতির প্রগ্রামের সব পরামর্শ দিচ্ছিলেন ক্ষণে ক্ষণে। একটু পরেই সোহেলের ফোন, তুমি কোথায়, আমি তো চলে এসেছি। আমরা প্রোজেক্ট পৌঁছে দেখি ফিসফিস বৃষ্টির মধ্যে বেশ কয়েকজন জাবিয়ান আড্ডা দিচ্ছে, সেলফি তুলছে। অনেক দিন পর সবার সাথে দেখা। বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার পর অনেকের সাথে আজই প্রথম দেখা হলো।
জুম্মার নামাজের পর আমরা দুপুরের ভাত খেলাম। বৃষ্টির দিনে খিচুড়ী ও গরুর মাংস খাবার টেবিলে এক অন্যরকম আবহাওয়া তৈরি করেছিল। খাবার শেষে আমরা আড্ডা দেওয়া শুরু করলাম। শাহিনের উপস্থাপনায় আমরা সবাই সবার পরিচয় দিয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণ করলাম। এর আগে কেক কেটে জাবির ৫১ বছর পুর্তির চড়ুইভাতির অনুষ্ঠিত শুরু হয়। সবার পক্ষ থেকে সোহেল ও শিমু কোটচাঁদপুরের নবাগত ইউএনও ৩৬ ব্যাচের দেলোয়ার সাহেবকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে শাহিন ভাইয়া কপোতাক্ষ পাড়ের জাবিয়ানদের নিয়ে একটি সংগঠন দাঁড় করানোর কথা বলেন। যার নাম দেন 'জাবিয়ান কপোতাক্ষ পরিবার'। সাধারণত এই পরিবারের সদস্যরা জন্ম, কর্ম ও বৈবাহিক সূত্রে কপোতাক্ষ পাড়ের হবে (ঝিনাইদহ, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার আংশিক অংশ নিয়ে)। তবে যেকোনো জাবিয়ান এই পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারবেন। প্রস্তাবটির ব্যাপারে সবাই ইতিবাচক মতামত দেই। স্মৃতিচারনের বক্তৃতায় ইউএনও দেলোয়ার সাহেব, শাহিন, সোহেল ও শিমু পরবর্তী ঈদে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে একটি বড় পরিসরে প্রগ্রাম করার ব্যাপারে মতামত প্রদান করেন। এরপর আমরা বাওড়ের ধারে যেয়ে গ্রুপ ছবি উঠাই। আবহাওয়া ভালো না থাকায় আমরা নৌকা ভ্রমণ না করেই বাড়ির পথে রওনা হই। ৫১ বছরের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আরো গৌরবের সঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন সবাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত চড়ুইভাতি অনুষ্ঠানে উপস্থিত জাবিয়ানদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কোটচাঁদপুর উপজেলার ইউএনও ৩৬ ব্যাচের দেলোয়ার, বণিক বার্তার সাংবাদিক ৩১ ব্যাচে শাহিন, জীবননগের একটি বেসরকারি ব্যাংকের ম্যনাজার ৩১ ব্যাচের সোহেল, কলেজের প্রভাষক ৩১ ব্যাচের জুয়েল, কেরু এন্ড কোম্পানির এর ডেপুটি ডিরেক্টর ৩২ ব্যাচের হালিম, কলেজের প্রভাষক ৩২ ব্যাচের শিমু আপু, সোনালী ব্যাংকে কর্মরত ৩৩ ব্যাচের বিপ্লব, প্রাইমারীর প্রধান শিক্ষক ৩৫ ব্যাচের জনি, ৩৫ ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তা পারভেজ এবং আমি ৪১ ব্যাচের মো.শাহিন রেজা। ব্যাক্তিগত সমস্যা থাকায় বেশ কয়েকজন জাবিয়ান আসতে পারেনি।
মো. শাহিন রেজা: সাবেক শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
এসআইএইচ/