লেখকের রুটি-রুজি ও প্রকাশকের বিবেক
একজন লেখক তার সমস্ত চিন্তা, দর্শন ও তার সর্বোচ্চ দিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত বইয়ে রূপ দেওয়ার একটি ক্ষণে পৌঁছান। সেই পাণ্ডুলিপি নিয়ে লেখক যখন প্রকাশকের কাছে হাজির হন, তখন প্রকাশক মহোদয় তার বিপণন কৌশল ও প্রকাশনার সকল পলিসি ভুলে যান। সেই মুহূর্তে প্রকাশনা ব্যবসায় যত মন্দা রয়েছে, সেসব লেখকের সামনে হাজির করেন।
প্রকাশক মহোদয় বলেন, এ বই তো পাঠক নেবে না, এখন আগের মতো বইয়ের পাঠকও নেই, প্রকাশনা ব্যবসায় টিকে থাকাই এখন দায় হয়ে পড়েছে। আপনি যদি আপনার আগেকার সব পরিশ্রম বৃথা দিতে না চান, তাহলে বই প্রকাশের যত খরচ আপনাকেই বহন করতে হবে। আবার কোনো কোনো লেখক বলেন, বই আমার খরচেই হবে কিন্তু আপনাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক বই খরিদ করতে হবে। কী হাস্যকর তাই না! লেখক তার বই নিজেই খরিদ করে ঘরে তুলবে। বেচারা লেখক হয়ে যেন ‘গুনাহগারের খাসি চুরির’ অপরাধ করে ফেলেছে। আর লেখক প্রকাশনার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এটিই ঘটে থাকে প্রতিনিয়ত।
এখন হয়ত কেউ কেউ বলতে পারেন, লেখা মানসম্মত নয়, তাই প্রকাশক সেখানে বিনিয়োগ করতে চায় না। কোনো কোনো লেখককে তো প্রকাশকরা অগ্রিম টাকা দিয়েও পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করেন। হ্যাঁ, কিছু লেখা মানসম্মত নয়। কিন্তু প্রকাশকরা সেটি সরাসরি বলেন, কীভাবে লিখলে মানসম্মত হবে সেই রাস্তা দেখানোর সৎ সাহসও রাখেন না। এমনকি যেসব লেখকের প্রকাশকরা অগ্রিম টাকা দিয়ে পাণ্ডুলিপি গ্রহণ করেন, সেসব লেখকের একজনের পাঠক তৈরিতেও প্রকাশকদের কোনো ভূমিকা আছে বলে আমার জানা নেই। সেসব লেখকে কেউ কেউ নিজের প্রচেষ্টায় তাদের পাঠক তৈরি করেছেন। একটি সংবাদ কিছুদিন আগেও গণ্যমাধ্যমে দেখা গেছে যে একজন রাষ্ট্রীয় কর্মচারী নিজের গায়ের জোরে বই কেনার একটি তালিকায় নিজের সব বই ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
হ্যাঁ, এবার প্রকাশকদের কথায় আসি। আমরা জানি পৃথিবীতে সব ব্যবসায়িক চুক্তির মধ্যে সব পণ্য ও অর্থের প্রত্যেকটি কড়ির হিসাব করা হয় খুবই সর্তকতার সঙ্গে। কেবল লেখকের সঙ্গে প্রকাশকের বই বিক্রির হিসাবের বেলায় শুরু হয় গড়িমসি। সারা বছর লেখকের সৃষ্টি বই বিক্রি করে তাদের ব্যবসা চাঙ্গা হলেও অধিকাংশ প্রকাশকই লেখকদের সামনে বই বিক্রির সম্পূর্ণ বিষয়টি স্পষ্ট করতে চান না। প্রকাশকদের কাছ থেকে আমাদের দেশে কেবল গুটিকয়েক লেখকই ন্যায্যভাবে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন। এভাবে আমাদের সাহিত্য ও প্রকাশনা চুক্তি চলতে থাকলে লেখকরা কোনো এক সময় নিস্তেজ হয়ে তার সৃজনশীলতার জায়গা থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার: সংবাদকর্মী ও প্রাবন্ধিক
এসএন