তোমার দেশে ফেরা
অনেক প্রতীক্ষাপ্রহর, শেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারির পড়ন্ত বিকেলে
ঢাকায় ফিরে এলে, ফিরে এলে তুমি মুক্ত স্বদেশে
পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে ফিরেই এলে তুমি,
তখন চারিদিকে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু ধ্বনি।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখলে-
তখনো বাতাসে বারুদের গন্ধ, লাশের গন্ধ, কঙ্কাল
চারদিকে লাখ লাখ স্বজন হারানো মানুষের আহাজারি।
তুমি এসে দেখলে বহু অসমাপ্ত কাজ জমা হয়ে গেছে
বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় বাহিনী ফেরত পাঠানো
সৈন্যদের দেশে ফেরত পাঠালে চোখের ঈশারায়।
স্বল্প সময়ে আদায় করলে শতাধিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি
গঠন করলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন
বছর ঘুরতে না ঘুরতে এল সংবিধান।
প্রতিষ্ঠা করলে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড
প্রতিষ্ঠা করলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন
বন্ধ করে দিলে রাজাকারদের বিচার প্রক্রিয়া
একবাক্যে তুমি রাজাকারদের মাফ করে দিলে
ভেবেছিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ আস্হা ফিরে পাবে।
বিরোধিতা এল,"আওয়াজ উঠল নিশ্চিহ্ন করে দাও"
তুমি বললে অবসান হোক সব বিরোধের,
অবসান হোক সব ভুল বোঝাবুঝি
নতুন দেশ হাতে হাত ধরে চল এগিয়ে নেই
গড়ে তুলি নতুন ইমেজ বিশ্বের বুকে।
তখন তোমার শ্বাস ফেলবার সময় নেই, তোমার কাটে নির্ঘুম রাত
দেশে ফেরা প্রায় এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসন
ব্যাংকগুলোর ভল্ট শূন্য, অর্থনীতির ভগ্ন দশা,
পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সম্পূর্ণ ধ্বংস করা
যোগাযোগ ব্যবস্থা
তাদের পোঁতা মাইনে সম্পূর্ণ অচল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরগুলো
খাদ্য গুদামগুলো সম্পূর্ণ শূন্যতায় ভরা,
হাহাকার অনাহারি মানুষের
বিপর্যস্ত ছিল গোটা প্রশাসন, সামরিক-বেসামরিক
সঙ্গে যুক্ত ছিল প্রচণ্ড বৈরী পরিবেশ
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও দেশের অভ্যন্তরে।
দেশ পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ নিপুণ হাতে সামাল দিলে তুমি।
পাটের গুদামে আগুন দেওয়া, ছিনতাই, মানুষ গুম
সার কারখানায় বিস্ফোরণ, গুমরে উঠল পরিস্থিতি
দেশের অভ্যন্তরে ওঁত পেতে থাকা পাকিস্তানি দালাল ঘাতক রাজাকার-আলবদর, জামায়াত
আর চীনপন্থী অতিবামরা জোটবদ্ধ হয়ে চালাতে লাগল একের পর এক, একের পর এক অন্তর্ঘাতমূলক তৎপরতা।
শেষ অবধি স্বাধীন দেশের একদল দক্ষ সৈনিক কামিয়াব
হলো!
প্রশ্ন জাগে, এই জন্য কী তুমি ফিরে এসেছিলে
টুঙ্গিপাড়ায় তোমার স্মৃতিসৌধ হবে বলে !
এসএন