ভয়াবহ আগুনে পুড়ছে শত শত মানুষ, মোবাইলে ব্যস্ত জনতা!
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় হতাহতদের উদ্ধার কাজে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী আর ফায়ার সার্ভিসের লোকজন সেইসঙ্গে স্থানীয় কিছু মানবিক মানুষ। মানুষের জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি শুরু সবার। কিন্তু এ সময় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আমাদের কিছু বাংলার মানুষ! তারা অগ্নিকাণ্ড রোধে নয়, নিজের মোবাইল ফোনে ‘সেলফি, ভিডিও, ফেসবুক লাইভে তারা ব্যস্ত। এটা আবার কেমন সোনার বাংলাদেশ! যে সোনার ছেলেরা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের তাপে জ্বলে পুড়ে ছাই হচ্ছে, এটা কোনো চিন্তার বিষয় না! তাদরে কিছু আসে যায় না। কারণ, আমাদের তো সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় হতে হবে।
জ্বলে পুড়ে মরছে বিষয়টা তাদের কাছে বড় নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে কার আগে কে আপলোড দিতে পারে তাই নিয়ে ব্যস্ত। শুধু কি তাই বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনে জ্বলে পুড়ে মরছে অসংখ্যা মানুষ। এটা দেখা বড় নয়, পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করে দ্রুত ছবি, ভিডিও, লাইভ ইত্যাদি হচ্ছে দেখার বিষয়!
ডিপোতে শত শত মানুষের আবেগময় কান্না আর কিছু জ্ঞানহীন মানুষের সেলফি আর মোবাইলে ভিডিও করা নিয়ে ব্যস্ত। আবার দেখা যায় অসংখ্যা মানুষ নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এই সময় উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করছেন। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের যারা প্রথম পযার্য়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তারা মুহূর্তে উড়ে যান। এরপর জীবন বাজি রেখে তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আর মানুষের জীবন বাঁচাতে কাজ করেছেন। যাতে ডিপোর ভিতরে আটকে পড়া মানুষগুলো যেন সুস্থভাবে বেঁচে আসতে পারে। তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে। যাতে জ্বলন্ত আগুনে কিছু পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, ফায়ার সার্ভিস থেকে শুরু করে সকল কাজে তাদের সহযোগিতার ছোট হাত বাড়িয়ে দিয়ে প্রাণের বিনিময়ে কাজ করছে। তারা সেলফি, ভিডিও নয় এ সময় আগুনের যন্ত্রণা থেকে ডিপোতে থাকা সেই ভাগ্যহীন মানুষগুলো যেন নিজের পরিবারের মা বাবার বুকে ফিরে চলে আসতে পারে। তার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন। আবার ডিপোর বাইরে এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অনেক মানুষ করছে ছোটাছুটি কোনো সময় চোখের পানি ফেলে আল্লাহ্, আল্লাহ্, তুমি রক্ষা কর, যে যার ধর্মের প্রভু’কে একবার হলেও বলছে আপনি মহান, এই অসহায় প্রাণ গুলোকে আপনি একটু রক্ষা করুন মালিক। কোনো সময় টিভির পর্দায় কোটি কোটি মানুষ সরাসরি দেখছে ডিপোর ঘটনা, এই সময় অনেকেই খাবার পর্যন্ত খেতে পারেনি, টিভির পর্দায় বসে দেখা মানুষগুলো হয়তো চোখের পানি ফেলছে, নয়তো নফল নামাজ পড়ে আবেদন করেছেন আল্লাহর কাছে, এমন কোনো মানুষ নেই তার প্রভুকে স্মরণ করেনি। যে যার মত করে সৃষ্টিকর্তা স্মরণ করেছেন। যেন মানুষ গুলো নিরাপদে বেঁচে আসতে পারে। অন্যদিকে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, রাজনীতি বিভিন্ন নেতাকর্মী ও নানা সামাজিক সংগঠনগুলো দেখা যায় তার চোখে মুখে দেশ প্রেমের একটি ভাব প্রকাশ হচ্ছে। তারা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে ছবি, ভিডিও ইত্যাদি তুলে নয় এখানে দূঃসময়ের আপনাদের যে যার মতো কাজ করে বিপদে পড়া মানুষগুলো যাতে আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারে।
স্যালুট জানাই বিশেষ করে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি উদ্ধার কাজ থেকে শুরু করে ওষুধ খাদ্য দিয়ে মানুষ পাশে ছিল গাউসীয় কমিটি বাংলাদেশ মানবিক টিম এবং নানা সামাজিক সংগঠনগুলো।
অন্যদিকে নিজের প্রাণের সকল ঝূুঁকি নিয়ে কাজ করেছে আমাদের ফায়ারসার্ভিস টিম। এরা জীবন্ত অবস্থায় কিছু শ্রমিকে নানা কৌশলে নিয়ে আটকে পড়া লোকজনকে বাঁচাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বলা যেতে পারে ফায়ার সার্ভিস দল আমাদের দেশের অহংকার। তারা সেই মুহূর্তে তাদের সহকর্মীর মৃত্যু দেখেছেন, কিন্তু দায়িত্বে একবিন্দু হাল ছাড়েনি। হ্যাঁ আপনি ছবি তুলবেন, ভিডিও প্রকাশ করবেন কিন্তু এ সময় আপনাকে সেলফি তোলা মানায় না, হয়তো আপনার তোলা ছবি বা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়া ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসতে পারে। আবার দেখা যায় উদ্ধার কাজ থেকে বেশি জনতা আগ্রহ প্রকাশ করে তার মোবাইল ফোনে ক্যাপশনবিহীন মতামত প্রকাশ করা, যা একটি ঘটনাস্থলে সহজে মেনে নেওয়া যায় না। যে সময়ে উদ্ধার কাজে ব্যস্ত সময় পার করবে, সেই সময় মোবাইলে ব্যস্ত আমাদের হাজার হাজার জনতা। আমাদের সমাজিক যোগাযোগ ব্যবহারে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তা নাহলে কোনো ঘটনাস্থলে মানুষের জীবন না বাঁচিয়ে, সাধারণ জনতা ব্যবস্ত থাকবে মোবাইলে। সে সময়ে ছবি ভিডিও ইত্যাদি নিয়ে যেখানে দেশের মিডিয়ার লোকজন সঠিক সংবাদ প্রদান করবেন, সেই স্থানে সেই সময় আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার লোকজন উদ্ধার কাজে ব্যস্ত না হয়ে তারা ছবি, ভিডিও, লাইভে ব্যস্ত। পরিবর্তন হোক এমন মানসিকতা।
লেখক: আমির হামজা, সংবাদকর্মী, সংগঠক ও শিক্ষার্থী সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ