অবসরপ্রাপ্ত অসহায় শিক্ষকদের আস্থার নাম অধ্যক্ষ সাজু
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, শিক্ষক জাতির কারিগর। পিতা-মাতা সন্তান জন্ম দেন আর সেই সন্তানকে মানুষ ও মানবিকবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তোলেন শিক্ষকমণ্ডলী। শিক্ষকদের অবদানের উপর ভিত্তি করে একটা জাতি তার শীর্ষ আসন চিনিয়ে আনে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। বাঙ্গালী জাতি আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। অথচ এই জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের আমরা সে হিসেবে যথাযথ মূল্যায়ন করতে পারিনি। যেখানে শিক্ষকদের মাথায় তুলে রাখার কথা ছিলো সেখানে আমরা দেখেছি অবসরপ্রাপ্ত বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক কল্যাণট্রাস্ট্র ভাতা ও অবসরকালীন ভাতার জন্য জনে-জনে, অফিসে-অফিসে, হাঁটতে-হাঁটতে জুতা ক্ষয় করে ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন। বছরে পর বছর গেলেও শিক্ষক জীবনের কাঙ্খিত টাকার দেখা পাননি। বহু শিক্ষক চিকিৎসাভাবে ও অন্নাভাবে নাজেহাল জীবন যাপন করে মনোক্ষুন্ন ও মনোকষ্ট নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন কিন্তু শেষ জীবনের জমানত নামক অবসর ভাতা ভোগ করতে পারেননি।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারী অবসর সুবিধা আইন-২০০২ অনুযায়ী, অবসর সুবিধা বোর্ড পরিচালনা বিষয়ে প্রবিধানমালা-২০০৫ প্রণীত হয়। এ প্রবিধানমালার ধারা ১০(১) অনুযায়ী, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা ২০০২ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে চালু হয়। ১৯৮০ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে প্রতি বছর চাকরির জন্য ২ মাস এবং ২০০৫ সাল থেকে প্রতি বছরের জন্য ৩ মাসের সরকার প্রদত্ত বেতন, সর্বোচ্চ ২৫ ধরে চাকরিকাল গণনা করে সেই পরিমাণ টাকা দেওয়া হচ্ছে। বেসরকারি (এমপিওভুক্ত) শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের বয়স ৬০ বছর অথবা চাকরিকাল ২৫ বছর পূর্ণ হলে পূর্ণ অবসরপ্রাপ্তির যোগ্যতা অর্জন করেন। বেসরকারি শিক্ষকদের তাদের প্রাপ্য অবসর ভাতা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সময়মতো টাকা দেয়া সম্ভব হয়নি।
২০১০ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে কল্যাণ সুবিধা দেওয়া হয়েছে ২৭৯ কোটি টাকা মাত্র। কিন্তু অধ্যক্ষ শাহাজান আলম সাজু কল্যাণট্রাস্ট্রের দায়িত্ব পাবার পর গত ১২ বছরে অবসরপ্রাপ্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭০২ জন শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার কল্যাণ সুবিধার অর্থ দেওয়া হয়েছে। অধ্যক্ষ সাজু কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর কল্যাণ ট্রাস্টকে ব্যাপক সংস্কার করেন। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীদের কল্যাণ সুবিধার টাকা সহজে পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় এক্সেস টু ইনফরমেশন (A2I) প্রজেক্টের মাধ্যমে কল্যাণ ট্রাস্টকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে । এর ফলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক কর্মচারীরা দেশের প্রত্যন্ত- অঞ্চল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে অতি অল্প সময়ের মধ্যে তাদের নিজ নিজ ব্যাংক হিসাব নম্বরে তাদের প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন।
কল্যাণ ট্রাস্টে অতীতে অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতির অসংখ্য অভিযোগ ছিল। যেমন একজনের টাকা অন্যজন নিয়ে যাওয়া, একই ব্যক্তি একাধিকবার চেক গ্রহণ, আবেদনপত্রের সিরিয়াল অনুসরণ না করা প্রভৃতি। বর্তমানে অধ্যক্ষ সাজু দায়িত্ব গ্রহণের পর এইসব অনিয়ম, ঘুষ, দূর্নীতি কঠোর হস্তে- দমন করেন। এখন “আগে আসলে আগে পাবেন” ভিত্তিতে আবেদনের ক্রমানুসারে কল্যাণ সুবিধা প্রদান করা হয়ে থাকে। অধ্যক্ষ সাজুর অবিস্মরণীয় সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাকে টানা পাঁচবার শিক্ষক কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব নিযুক্ত করে। সারা দেশের অসহায় শিক্ষকদের কাছে অধ্যক্ষ সাজু ভালোবাসার ও আস্থার নাম হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই পরোপকারী ছিলেন। বর্তমানেও স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সারা দেশের শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে লড়ে যাচ্ছেন। যেখানেই শিক্ষকদের সাথে অসঙ্গতি করা হয় সেখানেই তিনি সোচ্চার থাকেন। ‘একজন মানুষ আনতে পারেন জাতির জাগরণ’ এই স্লোগানটি যেন অধ্যক্ষ সাজু নিজের মধ্যে পুরোপুরি ধারণ করেছেন। অধ্যক্ষ সাজুর ন্যায় প্রত্যেকে অসহায় মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সোচ্চার হলে দেশটা শান্তিতে সোনায় সোহাগায় পরিণত হবে।
লেখক,
মুহাম্মদ ইয়াসিন আরাফাত ত্বোহা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল-tohaarafat1998@gmail.com
মোবাইল-01781704368