বেঁচে থাকতে আত্মসমর্পণ করুন: রুহুল কবির
উত্তাল আন্দোলনে ভেসে যাওয়ার আগেই জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, 'বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকতে নিশিরাতের আওয়ামী সরকার আবারো তাদের একান্ত অনুগত ও আওয়ামী ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষিত দলীয় আমলাদের দিয়ে তথাকথিত আরেকটি নির্বাচন কমিশন সাজিয়েছে।'
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আমরা আগেই বলেছিলাম, নির্বাচন কমিশন কাদের দিয়ে করবে সেই বিশ্বস্তদের তালিকা চূড়ান্ত করে রেখে ছিলেন শেখ হাসিনা। সার্চ কমিটি ছিল একটা আইওয়াশ মাত্র। কাজেই আওয়ামী-বাকশালীদের সিইসি ও ইসি নিয়োগ করা হয়েছে আরেকটি নীলনকশার নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য। সুতরাং এসব নাটক তামাশা বন্ধ করেন। সময় থাকতে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। সামনে উত্তাল আন্দোলনে ভেসে যাওয়ার আগেই বাঁচতে চাইলে জনগণের কাছে আত্মসমর্পণ করুন।'
রিজভী বলেন, 'বিএনপির বক্তব্য স্পষ্ট, আওয়ামী জাহেলিয়াতের আমলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংসকারী নির্বাচন কমিশনের প্রতি বিএনপির কোনো আগ্রহ নেই। এই মুহূর্তে বিএনপির একমাত্রই এজেন্ডা, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।'
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সমালোচনা করে রুহুল কবির বলেন, 'কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন প্রভুভক্তির চরম পরাকাস্টা দেখানোর দৌড় শুরু করবেন। চরম বিতর্কিত সাবেক আমলা কাজী হাবিবুল আউয়াল শেখ হাসিনার বড় পছন্দের। যখনই কোনো সাংবিধানিক পদে নিয়োগের সময় এসেছে প্রতিটা ক্ষেত্রেই কাজী আউয়ালের নাম শেখ হাসিনা বিবেচনা করেছেন। তার কারণ হলো আউয়াল একজন কট্টর আওয়ামী লীগার। তার পুরো পরিবার আওয়ামী-বাকশালী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যিনি কর্মজীবনে আইন মানেননি। সর্বোচ্চ আদালতের উভয় বিভাগ থেকেই যার কর্মজীবন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। যিনি বিচারকদের পুলিশ দিয়ে লাঞ্ছিত করেছেন। যিনি সংসদীয় কমিটির কাছে দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে পরিত্রাণ পেয়েছেন। যিনি অবৈধ নিয়োগের পরও সরকার ঘনিষ্ঠতার সুবাদে একের পর এক মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছেন। নিজের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় পিআরএল বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হয়েছেন। অবসরে না গিয়ে চুক্তিতে নিয়োগ পেয়ে সেই চুক্তি ক্রমাগতভাবে বছরের পর বছর বাড়িয়ে মাফিয়া সরকারের আনুকূল্য লাভের যোগ্যতা দেখাতে পেরেছেন।'
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সরকারের সমালোচলায় বিএনপির মুখপাত্র বলেন, দেশ আজ এমন এক অপশক্তির কবলে যাদের শাসনামলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম সর্বগ্রাসী আগুন, দাম কমেছে শুধু মানুষের। জনগণ চায়, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকুক। কিন্তু জনগণের চাহিদার প্রতি তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্ষমতাসীন অপশক্তি ব্যস্ত লুটপাট অর্থপাচার, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর বাচালতায়। তারা বিদেশ থেকে কাঁথা বালিশ কেনাসহ নানারকম ধান্দাবাজিতে ব্যস্ত।
“স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের জনগণের চাওয়া ছিল একটি উন্নত ও নিরাপদ বাংলাদেশ। অথচ, নিশিরাতের সরকারের লুটপাট-দুর্নীতি দেশকে আবারো তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত করেছে। আপনারা গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে অর্থের জন্য বাংলাদেশের নিশিরাতের সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের আহাজারি দেখেছেন। তিনি জার্মানিতে প্রকাশ্যে বিভিন্ন দেশের নেতা-মন্ত্রীদের সম্মেলনে প্যানেল আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেছেন , ‘বাংলাদেশের টাকা নেই, টেকনোলজি নেই’ অর্থাৎ বাংলাদেশ এখনো একটি তলাবিহীন ঝুড়ি”- বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘এ লুটেরা বেহায়া সরকারের মন্ত্রীরা দেশে বসে উন্নয়নের মহাপ্লাবনের গল্প শোনায় আবার বিদেশে গিয়ে টাকা নেই বলে হাত পাতে। এদের অবস্থা হলো উপরে উন্নয়নের বিশাল সাইনবোর্ড টাঙিয়ে তার ছায়ায় বসে ভিক্ষা করে।’
এসএন