তারেকের ইচ্ছায় পূরণ হবে বিএনপির শূন্যপদ
সাত বছর ধরে কাউন্সিল হয় না বিএনপির। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক পদই গত প্রায় সাত বছরে শূন্য হয়ে গেছে। বিএনপি নেতৃত্ব চলছে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। ৭ম কাউন্সিল না হওয়ায় দলে নতুন নেতৃত্বও আসেনি।
তা ছাড়া, কাউন্সিল করলে দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দল থেকে বাদ পড়তে পারেন এই কারণে কাউন্সিল থেকে পিছিয়ে আছে বিএনপি।
এই অবস্থায় দলটির স্থায়ী কমিটিসহ জাতীয় কমিটির বিভিন্ন শূন্যপদ পূরণ করতে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী হয়ে লন্ডন থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্দান্ত না পাওয়ায় সেগুলো পূরণ করা যাচ্ছে না।
সাম্প্রতিক সময় বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন চাঙা করতে নানামুখি কর্মসূচী পালন করছে। এই সময়ে দলের শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে দলের ভেতর থেকে দাবি উঠেছে। এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটিসহ সকল পর্যায়ে কমিটিতে থাকা শূন্যপদ পূরণ এবং বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফেরাতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে ঢাকাপ্রকাশ-কে জানিয়েছে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা।
সংশ্লিষ্টদের মতে, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল হবে না। কাউন্সিল করার ইচ্ছাও নেই। তাই দলে এখন শূন্যপদ পূরণের তোড়জোড় আছে। এর মধ্যে হাইকমান্ড কাজ শুরু করেছেন। দুর্দিনে যারা বিএনপির বিশেষ করে জিয়া পরিবারের পাশে আছে, নানা প্রতিকূল পরিবেশেও দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এমন পরীক্ষিত ও ত্যাগী প্রবীণ নেতার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম বয়সী নেতাদেরও কমিটিতে স্থান দিতে চায় দলটির হাইকমান্ড। শিগগিরই শূন্যপদগুলো ধারাবাহিকভাবে পূরণ করা হবে। যদিও দলটির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এই বিষয়ে সুনিদিষ্ট করে কিছু জানা নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘শূন্যপদ পূরণ কার্যক্রমের বিষয়ে এই মুহূর্তে দপ্তর অবগত নয়। এই বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। উনি যাকে যোগ্য বলে মনে করবেন তাকেই পদায়ন করা হবে। দলের গঠনতন্ত্রে এই বিষয়ে উনাকে একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া আছে।’
বিএনপির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। দরটির ষষ্ঠ কাউন্সিলে ৫০২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। তিন বছর মেয়াদি কাউন্সিলের হিসেবে ২০১৯ সালের মার্চে শেষ হয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ। ইতিমধ্যে অনেকে মৃত্যুবরণ করেছেন। কিন্তু গত প্রায় সাত বছরেও ৭ম কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। সরকারের দমন পীড়ন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বিবেচনায় কাউন্সিলের উদ্যোগও নেয়নি দলটি। তবে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের বক্তব্য হচ্ছে, মূলত কাউন্সিল হলে দলটির নেতৃত্বদানে সাংগঠনিক যোগ্যতা হারাবেন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। সেই কারণেই কাউন্সিল ছাড়াই সংগঠনকে গতিশীল করতে শূন্যপদ পূরণে বার বার বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বুধবার ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনকে সামনে রেখেই সারাদেশে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি নির্বাচনের সময়েও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলবে। ফলে সারা দেশের জেলা, মহানগরের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্যপদগুলো পর্যায়ক্রমে পূরণে উদ্যোগ চলমান রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে এরই মধ্যে শূন্যপদের একটি খসড়া তালিকা তৈরি করে দলের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে। যার উপর ভিত্তি করেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খোঁজ নিয়ে এসব পদে যোগ্য ও ত্যাগীদের পদায়ন শুরুর চিন্তা ভাবনা করছেন।
এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির যে সব পদ শূন্য রয়েছে সেগুলোতে নতুন মুখ আসছে এবং আসবে। সর্বশেষ ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদে রকিবুল ইসলাম বকুলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এতে বুঝা যাচ্ছে শূন্যপদে ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে এখন যেহেতু হাজারও নেতা-কর্মী কারাগারে রয়েছে। তাই মূলত এমন অবস্থায় নতুন করে দলের জাতীয় কাউন্সিল করার মতো পরিস্থিতি নেই। এখন স্থায়ী কমিটি ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরিবারের সদস্য ও তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানের অন্তর্ভুক্তির দাবিও উঠে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল শেষে দলটির স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে রাজনীতি থেকে দূরে আছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। বর্তমানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কোনো বৈঠকে এবং কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেন না তিনি। সালাহ উদ্দিন আহমেদ রয়েছেন ভারতের শিলংয়ে। মামলা জটিলতায় দেশে ফিরতে পারছেন না। কবে নাগাদ দেশে ফিরবেন তারও কোনো ঠিক নেই। বয়সের কারণে বৈঠকে অনিয়মিত ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার। তবে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণে এর আগেও একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছিল বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু সেসব উদ্যোগও খুব একটা সফলতার মুখ দেখেনি।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শূন্যপদগুলোতে অভিজ্ঞ নেতাদের নেয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছিল স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতারা। এতে বাগড়া দেন স্বয়ং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি শূন্যপদগুলোতে ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতাদের নেওয়ার পক্ষে নিজের অবস্থান জানান। মূলত এ কারণেই স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলোতে কাউকে নেওয়া হয়নি। তবে ২০১৯ সালের জুন মাসে সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদে নেওয়া হয়।
বর্তমানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য হতে পারেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু প্রমুখ। ভাইস-চেয়ারম্যান হওয়ার তালিকায় রয়েছেন যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুনুর রশীদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বিএনপি এখন প্রবীণ ক্লাবে পরিণত হয়েছে। যারা নেতৃত্বে আছেন সবারই বয়স হয়েছে। নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে নেই ছাত্রদল থেকে উঠে আসা কোনো নেতৃত্ব। এ জন্য স্থায়ী কমিটিতে তরুণদের জায়গা করে দেওয়া উচিত। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে কারা আসবেন সেটি নির্ভর করছে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তের উপর।
আইনি জটিলতায় খালেদা জিয়া রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হওয়ার কারণে স্থায়ী কমিটির পুরো কর্তৃত্ব এখন তারেক রহমানের হাতেই। তিনি যাদেরকে মনে করবেন তাদেরকেই কমিটিতে নেবেন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এটা এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয় যেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যতীত অন্য কারও কোনো বক্তব্যে থাকার কথা নয় বলে মনে করেন তারা।
এনএইচবি/এমএমএ/