‘সরকার পতনের খেলা সময়মতো হবে’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ক্ষমতাসীনরা দেশের জনগণের সব সাংবিধানিক এবং মৌলিক অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ভোট দেওয়ার অধিকার এমনকি নিরাপদে বেঁচে থাকার অধিকারও হরণ করেছে। অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেশকে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে তারা। জনগণের রাজনৈতিক সব অধিকার খর্ব করে আওয়ামী সরকার দেশে কর্তৃত্ববাদী স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। এই চেষ্টা সফল হবে না। সরকার পতনের খেলাটি সময়মতো খেলা হবে। তখন আর সরকার ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে ‘মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মান্না।
তিনি বলেন, এখন নতুন করে উপাত্ত সুরক্ষা আইন নামে আরেকটি নিবর্তনমূলক আইন পাসের পাঁয়তারা করছে। এর মাধ্যমে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে জনগণের কর্মকাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করবে সরকার। ব্যক্তিগত যন্ত্রে আড়িপাতার মাধ্যমে তারা জনগণের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার সাংবিধানিক অধিকার হরণ করবে। ইতোমধ্যে ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এই ব্যবস্থায় জনগণের পাশাপাশি গণমাধ্যমের টুঁটি চেপে ধরতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এই আইন মৌলিক মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে হরণ করবে।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ২০২১ সালের পর যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে এবারও আমন্ত্রণ পায়নি বাংলাদেশ। এই সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়ার ৪ দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও মালদ্বীপসহ বিশ্বের ১১১টি দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে। দুর্নীতির ধারণা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরও একধাপ অবনমন হয়েছে। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের গত ১৪ বছরের শাসনামলে দেশে দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটের মাধ্যমে তারা দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি। শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া জনগণের মৌলিক, সাংবিধানিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যাবে না, আয় বৈষম্য কমানো যাবে না, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক সব অধিকার হরণ করছে। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিও এর বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দাবি আদায় করতে পারছে না। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সংঘাত নয়, রাজনৈতিকভাবেই সরকার এবং সরকারি দলকে মোকাবিলা করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক এবং মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির আশঙ্কাজনক অবনমন হয়েছে। দেশের মানুষের সব মৌলিক এবং সাংবিধানিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরও গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা কমেনি। জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নানান কালাকানুনে জনগণকে বেঁধে ফেলা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, অ্যাক্টিভিস্ট এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দেশে এখন কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।
এমএইচ/এসজি