বিএনপির রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় কেন খোকন?
বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে সষ্ক্রিয় থাকলেও সম্প্রতি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবির আন্দোলনে দলটির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনকে দেখা যাচ্ছে না। দলের অন্য সব যুগ্ম-মহাসচিব ঘোষিত সমাবেশ কর্মসূচি পালন টিমের নেতৃত্বে থাকলেও কোথাও নেই ৯০ দশকের ছাত্রনেতা, ডাকসুর সাবেক নির্বাচিত জিএস খোকন।
গুঞ্জন উঠেছে-তাহলে কী এবার দায়িত্ব হারানোর তালিকায় তিনিও যুক্ত হচ্ছেন ।
বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়-চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকনের মধ্যে রয়েছে গভীর সুসম্পর্ক। একই প্যানেল থেকে ডাকসু’র ভিপি-জিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন তারা। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা এখনো বেশ ভালো। দুই নেতার এই সুসম্পর্কই সাবেক ছাত্রনেতা খোকনের ভবিষ্যত রাজনীতিকে অনেকটা শঙ্কার মধ্যে ফেলেছে। কারণ, নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আমান উল্লাহ আমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) ভিপি ও দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মধ্যে রয়েছে বৈরিতার সম্পর্ক ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব। সেই দ্বন্দ্বে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির।
আমান দীর্ঘদিন দলের চেয়ারপারসনেরর উপদেষ্টা পদে ছিলেন। দলে তেমন গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না। কিন্তু গত বছরের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক হিসেবে দায়িত্বে আসার পর থেকে তিনি আবার দলীয় রাজনীতির সামনে চলে এসেছেন। এখন তিনি রাজধানীর কর্মসূচি সফল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখাছেন। কিন্তু এই অবস্থায়ও তার রাজনীতির অন্যতম সহযোগী খায়রুল কবির খোকনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও সক্রিয় দেখা যাচ্ছে ডাকসুর আমান-খোকন প্যানেলের এজিএস নাজিম উদ্দিন আলমকে। এ ছাড়া আরও অনেক নেতা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, যারা দলের অনেক দিন থেকে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা সদরে প্রথম দফায় যে ৩২টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে সেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকায় ছিলেন না খায়রুল কবির খোকন। তার ধারাবাহিকতায় ৩৯টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলেও সেখানেও দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকায় তার নাম নেই। এমনকি গত ২৬ ডিসেম্বর নরসিংদীর সমাবেশেও সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। অথচ গত নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে কর্মসূচি করতে গিয়ে সরকার দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে নরসিংদীর সদর চিনিশপুর উপজেলার দলীয় অস্থায়ী কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। পরবর্তীতে মামলার আসামিও হয়েছেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি অনুসরণ করে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের আঞ্চলিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে যুগ্ম মহাসচিবদের মধ্যে অনেকেই জেলার দায়িত্বের পদ ছেড়েছেন। কেবল খোকন নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ আঁকড়ে রেখেছেন। এ নিয়ে রিজভীর সঙ্গে তার সম্পর্কের টানাপোড়েন রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আমান উল্লাহ আমানের রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠাকে সহজভাবে নিতে পারছেন না দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি দলের কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্ব পালন করায় সহজেই হাইকমান্ডকে নিজের মতো করে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছেন। ফলে তিনি যাদের পছন্দ করেন না তারা রিজভীর আক্রোশের শিকার হচ্ছেন। তিনি নিজের ইচ্ছা পূরণ ও প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য ‘নির্দেশিত বার্তা’ হিসেবে কখনো অব্যাহতি, কখনো বহিষ্কার, আবার কখনো প্রত্যাহার করছেন।
এ বিষয়ে জানাতে চাইলে শনিবার (৮ জানুয়ারি) রাতে খায়রুল কবির খোকন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন ‘আমান উল্লাহ আমান ও আমি এক প্যানেলে ডাকসু’র ভিপি-জিএস ছিলাম। দুইজনই স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রনেতা হিসেবে রাজপথে অধিকার আদায়ে লড়াই করেছি। এখনও করছি। দুজনেই ছাত্রদল থেকে উঠে আসা। কাজেই দুজনের মধ্যে মিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে আঞ্চলিক রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত আছি, কিছুটা ঝামেলায় আছি। তবে শারীরিকভাবে সুস্থ আছি। দলের অন্যান্য যুগ্ম-মহাসচিবরা চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবির চলমান সমাবেশ কর্মসূচিতে সাংগঠনিক টিমে দায়িত্ব পালন করছেন। কী কারণে নেই জানি না। তবে আমার সঙ্গে দলের কারও কোনো বৈরি সম্পর্ক নেই।’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘এসব কথাবার্তা মুখরোচকদের। যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন অত্যন্ত ভদ্র ছেলে। সে ৯০ দশকের ছাত্রনেতা। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে (খায়রুল কবির) যেহেতু একটি জেলার সভাপতির দায়িত্বে আছে তাই হয়তো সমাবেশ কর্মসূচির সাংগঠনিক টিমে সেভাবে রাখা হয়নি। তা ছাড়া আমিই তো দলের নীতিনির্ধারণী কেউ নই, এরজন্য দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম আছে। তবে সে তো কাজ করে যাচ্ছে।’
এপি/এমএমএ/