নিবন্ধনে আগ্রহ নেই রাজনৈতিক দলগুলোর!
নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছে। আর এ পর্যন্ত আবেদন জমা দিয়েছে মাত্র দুটি রাজনৈতিক দল। অথচ নিবন্ধনের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হচ্ছে আগামী ২৯ আগস্ট।
জাতীয় নির্বাচনে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হচ্ছে দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হতে হবে। দেশে ছোট-বড় অসংখ্য রাজনৈতিক দল থাকলেও নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ৩৯টি রাজনৈতিক দলের।
প্রত্যেক জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন দলের নিবন্ধনের সুযোগ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। তারই ধারাবাহিকতায় এবারও নিবন্ধন নিতে আগ্রহী দলগুলোর কাছ থেকে দরখাস্ত আহ্বান করেছিল নির্বাচন কমিশনার।
গত ২৬ মে আবেদন আহ্বান করেছিল কমিশন। প্রায় তিন মাস সময় দিয়ে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু কমিশনের সময়সীমা শেষ হতে চললেও এখন পর্যন্ত তেমন সাড়া পড়েনি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অন্তত ১৩ শর্ত পূরণ করে আবেদন করতে হয়। শর্তগুলো বেশ কঠিন হওয়ায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই নিবন্ধনের বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখায় না।
এদিকে কমিশনের শর্তপূরণ করে নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে গণঅধিকার পরিষদ। জানা গেছে, আগামী সপ্তাহে বা চলতি সপ্তাহের যে কোনো দিন গণঅধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে নিবন্ধনের আবেদন কমিশনে জমা দেওয়া হবে।
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, আমাদের সব কাজ শেষ এখন যে কোনো দিন আবেদন জমা দেব। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া শর্তগুলো পূর্ণ করেই আবেদন করব, যেন কোনোভাবেই নিবন্ধন থেকে বাদ না যায়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১০টির মতো দল আবেদনপত্র তুলেছে। আর আবেদনপত্র জমা দিয়েছে দু’টি দল। এর একটি হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল রিপাবলিকান পার্টি, অন্যটির নাম বঙ্গবন্ধু দুস্থ ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন পরিষদ।
নিবন্ধীকরণে আগ্রহী রাজনৈতিক দলকে স্বীয় লেটারহেড প্যাডে আবেদন করতে হবে।
আবেদন করতে যা প্রয়োজন
কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধনের জন্য কমিশনে আবেদন করতে হলে লাগবে দলের গঠনতন্ত্র; দলের নির্বাচনি ইশতেহার, যদি থাকে; দলের বিধিমালা, যদি থাকে; দলের লোগো এবং পতাকার ছবি; দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি বা সমমানের কমিটির সব সদস্যের পদবিসহ নামের তালিকা; দলের নামে রক্ষিত ব্যাংক হিসাব নম্বর ও ব্যাংকের নাম এবং উক্ত অ্যাকাউন্টের সর্বশেষ স্থিতি; দলের তহবিলের উৎসের বিবরণ; দলের নিবন্ধনের দরখাস্ত করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির অনুকূলে প্রদত্ত ক্ষমতাপত্র; নিবন্ধ ফি বাবদ সচিব, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বরাবরে জমাকৃত অফেরতযোগ্য টাকার ট্রেজারি চালানের কপি (ট্রেজারিতে টাকা জমাদানের কোড নম্বর-১০৬০১০১১০০১২৫-১১০০০০০০০-১১০০১০০০-১৪২২২০৪); দরখাস্ত দাখিলে দিন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভের সমর্থনে প্রামাণিক দলিল; অথবা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশগ্রহণকৃত নির্বাচনী এলাকায় প্রদত্ত মোট ভোট সংখ্যার শতকরা পাঁচ ভাগ ভোট লাভের সমর্থনে কমিশন বা তদকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কর্তৃক ইস্যুকৃত প্রত্যয়নপত্র; অথবা দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, তা যে নামেই অভিহিত হোন না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দপ্তর এবং অন্যূন ১০০টি উপজেলা বা ক্ষেত্র মতে, মেট্রোপলিটন থানায় কার্যকর দপ্তর এবং প্রতি উপজেলায় বা ক্ষেত্রমত, থানায় অন্যূন দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্ত থাকার সমর্থনে প্রামাণিক দলিল জমা দিতে হবে।
সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে যেকোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর ওই দলের অনুকূলে কমিশন ফরম-৩ এ একটি নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করবে এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নাম সরকারি গেজেটে প্রকাশ করবে ইসি।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ দল নিবন্ধনের জন্য ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল ইসি। সময় দেওয়া হয়েছিল ওই বছর ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল ৭৬টি রাজনৈতিক দল। কেএম নূরুল হুদা কমিশন নানা কারণে সবার আবেদন বাতিল করেছিল। পরবর্তীতে আদালতের আদেশে নিবন্ধন পায় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম ও বাংলাদেশ কংগ্রেস।
তার পাঁচ বছর আগে ২০১৩ সালে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করলে ৪৩টি দল আবেদন করেছিল। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশন সে সময় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ) ও সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট নামে দু’টি দলকে নিবন্ধন দেয়।
এক-এগার সরকারের সময় ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো দলগুলোকে নিবন্ধন দেয়। সে সময় ১১৭টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। যাচাই-বাছাইয়ে পর নিবন্ধন পায় ৩৯টি দল। সবমিলিয়ে গত ১৪ বছরে মোট ৪৪টি দলকে নিবন্ধন দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় ও আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়। ফলে বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল
রয়েছে ৩৯টি।
এনএইচবি/আরএ/