ক্ষমতায় থাকার ধরনা দিতে ভারত যাচ্ছেন হাসিনা: রিজভী
ফাইল ফটো
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা সেপ্টেম্বর মাসে ভারত যাচ্ছেন ক্ষমতায় থাকার ধরনা দিতে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পটভূমি রচনা করে এসেছেন। এখন আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীরা বলছেন— তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) আওয়ামী লীগের কেউ না।
রবিবার (২১ আগস্ট) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ সব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট মহানগর থেকে এমপি হয়েছেন কোন দলের টিকিটে? ওবায়দুল কাদের অনুমোদিত সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর সদস্য কে? কিন্তু দেশবাসীসহ আমরা সবাই জানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে দেননি। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদটি ব্যবহার করেই বক্তব্য দিয়েছেন।
রুহুল কবির বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অসংকোচ সত্য প্রকাশের পর দেশের জনগণের কাছে স্পস্ট হয়েছে যে, বিদেশি সরকারের মদদেই বর্তমান সরকার বিনা ভোটে জগদ্দল পাথরের মতো ক্ষমতায় বসে আছে, আগামীতেও তারা যে বিনা ভোটে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তা পরিষ্কার করে বলেছেন। সরকার ১৩ বছর ভিন্ন দেশের মদদে জোর জবরদস্তি করে বন্দুকের নলের মুখে ক্ষমতায় থাকার কারণেই এখন গণশত্রুতে পরিণত হয়েছে।
‘একটা বিষয় স্পষ্ট যে সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপের জন্য অনুরোধ করছে।’
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, একটা রাষ্ট্র কতটা অপদার্থ অক্ষম ও জনবিচ্ছিন্ন হলে অন্য রাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হয়। এরাই বিদেশিদের পদলেহন করে ক্ষমতায় আছে আবার এরাই গলাবাজি করে বলে ক্ষমতার জন্য অন্যরা বিদেশিদের দ্বারে-দ্বারে ঘুরছে। এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমেরিকাকে বলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে, ভারতকে বলে হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে- এটাই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ। জনগণের প্রতি তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। তারা বিনা ভোটে ক্ষমতায় থাকার তদবির নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তিনি বলেন, ভারতের কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমতায় টিকে থাকার এ হীন আকুতি স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্বার্থ ও মর্যাদার পরিপন্থী। রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব বিরোধী চক্রান্তে জড়িত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অঙ্গ বা কারও মক্কেলরাষ্ট্র নয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা নির্ভর করে দেশের জনগণের অভিপ্রায়ের ওপর। অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভিপ্রায়ে নয়।
রিজভী বলেন, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সরকার ক্ষমতায় আসবে যাবে জনগণের ভোটের মাধ্যমে। জনগণ চাইলে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারে, আর না চাইলে না। অতীতে নির্বাচনের প্রাককালে দৌড়ঝাঁপ লক্ষ করেছে জাতি। ২০১৮ সালে জনগণকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার তথাকথিত চ্যাম্পিয়ানের দাবিদার আওয়ামী লীগের আজ কি করুণ ভয়াবহ বিপর্যস্ত অবস্থা। আজ তারা জনগণকে বানিয়েছে প্রতিপক্ষ। জনগণের সাথে তাদের শত্রুতা। জনগণের ভোটের অধিকার, মানবাধিকার তারা স্বীকার করতে চাননা। তাই তারা বিদেশীদের কাছে দেশের সার্বভৌমত্বকে দূর্বল করে নিজেদের টিকে থাকার জন্য ভিক্ষার হাত প্রসারিত করেছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী নিষ্ঠুর সরকার গত এক যুগের বেশী সময় ধরে শুধুমাত্র তাদের অবৈধ ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে গোটা দেশে ভয়ঙ্কর এক নারকীয় পরিবেশ তৈরী করেছে। পুলিশ-র্যাবসহ গোয়েন্দা এজেন্সিগুলো অন্যায়ভাবে ভিন্ন মতাবলম্বিদের ওপর লেলিয়ে দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকার এ রাষ্ট্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক সন্ত্রাসী ও বিপজ্জনক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। পরিনতিতে জনসমাজে সৃষ্টি হয়েছে আতঙ্কের এক ভীতিকর পরিবেশ। তাই সরকারের সমালোচনাকারী বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা, নাগরিক সমাজের সত্য উচ্চারণে নির্ভীক ব্যক্তিদের তুলে নিয়ে গুম ও বিচারবহির্র্ভূত হত্যা করে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার এক আবশ্যকীয় কর্মসূচিতে পরিণত হয়েছে।
আরএ/