বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল: হানিফ
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জিয়াউর রহমান জড়িত ছিল। জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের পুনর্বাসন করেছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল রশিদ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে বলেছিল, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা কিভাবে জড়িত ছিল। সে বলেছিল হত্যাকাণ্ডের আগে একাধিকবার তারা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছিল। জিয়াউর রহমান তাদের বলেছিল তোমরা এগিয়ে যাও, আমি তোমাদের পেছনে থাকব।
রবিবার (১৪ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকাণ্ডের পর জিয়া ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করেছিল। খুনিরা যাতে জিয়ার নাম না বলে এজন্য তাদের ইনডেমনিটি দিয়েছিল জিয়া। জিয়া যদি হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি খুনিদের বিচার কেন করেননি। তাদের বিচার করতে তার কি সমস্যা ছিল। সে উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছিল।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ারও তখন থেকে বঙ্গবন্ধুর উপর একটা ক্ষোভ ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করে দেশ স্বাধীন করেছিল। আর এরা ছিল পাকিস্তানের পক্ষে। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে। কর্নেল ফারুককে সংসদে বসিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে বেইমানি করেছে।
মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া ১৯৯১ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন তার জীবনীতে জন্ম তারিখ ছিল ৫ সেপ্টেম্বর। এই খালেদা জিয়া ১৯৯৩ সালে হঠাৎ করে ১৫ আগস্ট কেক কাটা শুরু করল। এর কারণ ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী। গোটা জাতির শোকের ও বেদনার দিন এরা আনন্দ করে। কারণ বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছে। আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। সে স্বাধীনতা চায়নি। এর জন্য সে ১৫ আগস্ট কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করে। অথচ ১৯৮৪ সালে যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হন তখন তার পিতা তৎকালীন পত্রিকা ‘নিপুন’ এ সাক্ষাতকারে বলেছেন ১৯৪৫ সালে যখন ২য় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলো ৫ সেপ্টেম্বর সেদিন খালেদা জিয়া জন্মগ্রহণ করেছিল। তখন হাসপাতালের ডাক্তার বলেছিল আজ বিশ্বে একটা শান্তি আসবে। তাই আপনার মেয়ের নাম শান্তি রাখেন। কিন্তু তার পিতা ইস্কান্দার সাহেব ভাবলেন শান্তি নামটা হিন্দু নাম। তাই তিনি খালেদা খানম রেখেছেন। এতেই বুঝা যায় তার জন্ম ৫ সেপ্টেম্বর। আর এই খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে উল্লাস করে কেক কাটে।
আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। সেই যুদ্ধ করেছে কি-না আমরা জানি না। খালেদা জিয়া তখন ছিল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। জিয়াউর রহমান অনেক বার লোক পাঠানোর পরও সে জিয়ার কাছে যায়নি। স্বাধীনতার পর যখন দেশ স্বাধীন হয়েছিল তখন জিয়াউর রহমান আর খালেদা জিয়াকে নিব না। কারণ খালেদার প্রতি জিয়ার অবিশ্বাস, সন্দেহ ও ঘৃণা চলে এসেছিল। তখন খালেদা জিয়া বঙ্গমাতার কাছে কান্নাকাটি করেছিল। বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে ডেকে বলেছিল খালেদা আমার মেয়ের মতো। আমি বলছি তুমি তাকে ঘরে নিয়ে যাও। তখন বঙ্গবন্ধুর চাপে বাধ্য হয়ে জিয়াউর রহমান খালেদাকে ঘরে তোলে। বঙ্গবন্ধুর কারণে খালেদা জিয়ার সংসার টিকে যায়। আর সেই খালেদা জিয়া তার শাহাদাত বার্ষিকীতে জন্মদিন পালন করে।
হানিফ বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিলেন এবং তার ১৯ মিনিটের ভাষণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর মধ্যে একটা। যা জাতিসংঘ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ভাষণটি সমস্ত শ্রেষ্ঠ ভাষণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই ভাষণে বঙ্গবন্ধু যে আবেগ দিয়ে মানুষের অধিকারের কথা তুলে ধরেছেন, পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠীর নির্যাতন ও নিপিড়নের কথা বলেছেন এবং আমাদের বলেছেন যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে। সেদিন তার কথায় সকল মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জন করে। উনি যে কিভাবে মানুষকে মোটিভেশন করতে পারতেন তখন যারা ছিল তারা দেখেছে।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেই তিনি আমাদের জাতির পিতা। আমাদের দেশে ধর্ম ব্যবসায়ী জামায়াতে ইসলামী বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা হিসেবে মানে না। একবার আমি ইমামদের একটা অনুষ্ঠানে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছি আপনারা বঙ্গবন্ধুকে কেন জাতির পিতা হিসাবে মানেন না। তারা বলল মুসলমানদের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.)। আমি তাদের বললাম পাকিস্তানের আমলে আপনারা মোহাম্মদ আলী জিন্নাকে জাতির পিতা মানতে তো কোনও অস্বীকার করেননি। এখন কেন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা মানতে আপনাদের সমস্যা। এরা হলো স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার। মুসলিম বিশ্বের জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) কিন্তু বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এ রাষ্ট্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর জন্যই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমারা বাঙালি হিসেবে বঙ্গবন্ধু পরিচয় দিয়ে গেছেন। যতদিন এই বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা হিসেবে থাকবেন।
আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম দিন। বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। তাকে হত্যা করল ক্ষমতা দখলের জন্য। কিন্তু বঙ্গমাতা ও পরিবারের অন্য সদস্যের কি অপরাধ ছিল। তাদের কেন হত্যা করা হলো। খুনিরা শিশু রাসেলকেও ছাড়েনি। মায়ের কাছে নেয়ার কথা বলে নির্মমভাবে হত্যা করে। কত বড় পিশাচ হলে এমন কাজ করতে পারে। এ হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর আমরা পার করেছি এবং এর বিচার আমরা করেছি।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের পিছনে যারা রয়েছে তাদের মুখোশ উন্মোচন হওয়া দরকার। এদের পিছনে মদদদাতা ও পরিকল্পনাকারী রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্যে দিয়ে তারা একটা জাতিকে হত্যা করল। এর জন্যই কি আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা চেয়েছি এ দেশ হবে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক দেশ। একটি উন্নত দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। বঙ্গবন্ধু যদি আজ জীবিত থাকত তাহলে বাংলাদেশ আরো বেশি উন্নত দেশ হতো। বঙ্গবন্ধু একজন দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতা ছিলেন। বাংলাদেশকে নিয়ে তার স্বপ্ন ছিল অনেক। বঙ্গবন্ধুকে সারাবিশ্বের মানুষ শ্রদ্ধা করত। বিশ্বের বড় বড় রাষ্ট্র প্রধানরা তাকে সন্মান করত। ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘আমি হিমালয় দেখিনি, আমি শেখ মুজিবকে দেখেছি। যার ব্যক্তিত্ব ও সাহস হিমালয়ের মতো’।
শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব কে এম শহিদ উল্লার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন।
এসএম/ এসআইএইচ