রাজপথ কি আবার উত্তপ্ত হচ্ছে?
উত্তপ্ত হয়ে উঠছে রাজনীতির মাঠ। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ও মাঠের রাজনৈতিক দল বিএনপি নেতাদের বিভিন্ন বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। শোকের মাস শেষ হলেই সেপ্টম্বরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতারা রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
বর্তমানে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নিত্যপণ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাওয়া, গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য, লোডশেডিংয়ের কারণে এমনিতেই সাধারণ মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। এর সঙ্গে আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানামুখি অবস্থান বিশেষ করে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় রাজনীতিতে এক ধরেনর অস্থিরতা বিরাজ করছে।
অপরদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সরকারের মন্ত্রীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন আগামী নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তা ছাড়া উচ্চ আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এই অবস্থা বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে এবং সুষ্ঠু ও অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব ধরেনর সহযোগিতা দেবে।
দেশের রাজনীতির বর্তমান এই পরিস্থিতিতে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি ও তার মিত্ররা চাচ্ছে যে করেই হোক মাঠ দখলে নিয়ে সরকার উৎখাত করতে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগও সমুচিত জবাব দিতে মাঠে নামতে প্রস্তুত। শোকের মাস শেষ হলেই বিভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলটির বেশ কয়েকজন নেতার কথায়। এমন আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা রাজপথ থেকে ক্ষমতায় এসেছি। তারা যেভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে রাজপথ মনে হয় আমরা ভুলে গেছি। আমরা আছি। অচিরেই রাজপথে দেখতে পাবেন। আগস্ট শোকের মাসে হয়তো কিছু কিছু প্রোগ্রাম সেভাবে করতে পারছি না। আমরাও মাঠে আসছি, আমরাও মাঠে নামব। মাঠেই খেলা হবে। মোকাবিলা করা হবে। আর যা কিছুই হোক ফ্রি স্টাইলে বাংলাদেশে হতে দেব না।
অন্যদিকে বিএনপিও রাজপথ দখলের মধ্য দিয়ে সরকারের বিদায় ঘণ্টা বাজাতে চায়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, প্রথমে দেশের উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে এরই অংশ হিসেবে জেলা এবং মহানগরগুলোতে বিক্ষোভ সমাবেশ করব। জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পতনের জন্য বাধ্য করব। সব ব্যর্থতার দায় নিয়ে এই সরকারকে অবিলম্বে পদত্যাগের দাবি জানান মির্জা ফখরুল।
বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) ঢাকার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে দেওয়া এক বক্তব্যে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সরকারকে বলতে চাই, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন। আপনাদেরকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তারপর নির্বাচন দিয়ে সংসদ গঠন করতে হবে।
প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের এমন কথায় বোঝাই যাচ্ছে আগস্টের পর রাজনীতির মাঠে বেশ উত্তাপ ছড়াতে পারে। আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল। এসব বিষয় সামনে রেখে প্রস্তুতি নিতে নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
কাউন্সিলকে সামনে রেখে শোকের মাস শেষ হওয়ার পর পরই আওয়ামী লগি আবার সক্রিয় হয়ে উঠবে রাজনীতির মাঠে। সারাদেশে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত দলীয় ও সহযোগি সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করতে সভা-সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
কাউন্সিলের পাশাপাশি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও সরব থাকবে আওয়ামী লগি। এমন কথাই বলছেন দলের নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপি যেভাবে সরব হয়ে উঠছে এত দিনে আওয়ামী লীগ শুধু তাদের কথা শুনেছে, এবার সেসব কথার জবাব দেওয়া হবে। বিএনপির সময় মাগুরা মার্কা নির্বাচন ও ভুয়া ভোটার তালিকার বিষয়টি পুনরায় মানুষকে মনে করে দিতে সারাদেশে সভা সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ।
একই সঙ্গে সরকারের গত কয়েক বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডও দেশবাসীর সামনে তুলে সরকারি দল আওয়ামী লীগ।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার মনে হয় বিএনপি এগুলো কথার কথা বলছে। তারা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। এখন যা বলছে সব রাজনৈতিক কথা বার্তা।
এনএইচবি/এমএমএ/