বিএনপিতে ধরপাকড় আতঙ্ক
গ্রেপ্তার ও মামলায় জর্জরিত অধিকাংশ নেতা-কর্মী বলে বিএনপির অভিযোগ। বিএনপি বলছে, কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলের সক্রিয় নেতাদের ‘টার্গেট’ করে নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কখনো পুরনো মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এমনকি দ্রুতগতিতে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন মামলার চার্জশিট। অনেকে গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছাড়া। শুধু তৃণমূল নেতা-কর্মী নন, কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাও আছেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সরকার ফের বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পথ বেছে নিয়েছে বলে মনে করছেন দলটির নীতি নির্ধারকরা। যদিও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপির এসব অভিযোগ মানতে নারাজ। তারা বলছে, কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা মামলা থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে গ্রেপ্তার করতেই পারে। এখানে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ বা বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নেই।
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ— মামলার জালে আটকানো এই সরকারের পুরোনো কৌশল। মামলা দিয়ে বিএনপিকে কাবু রাখতে চায় সরকার। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগ সারাদেশে বিভিন্ন মামলায় বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় ও তৃণমূলের প্রায় সব নেতাই এসব মামলার আসামি। কারও কারও বিরুদ্ধে শতাধিক মামলাও রয়েছে। এ সব মামলায় অনেকে কারাগারে। মামলায় হাজিরা দিতে প্রায় প্রতিদিন কেন্দ্রীয়সহ তৃণমূল নেতা-কর্মীদের আদালতের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। কেউ কেউ পরোয়ানা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। অনেক মামলার বিচারও শুরু হয়েছে। আবার পুরোনো অনেক মামলায় নেতাদের নামে পরোয়ানাও জারি হচ্ছে।
দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডকে ভালোভাবে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি যাতে ফের সংগঠিত হতে না পারে সে জন্য নতুন করে মামলা ও গ্রেপ্তারের কৌশল নেওয়া হয়েছে। সক্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের টার্গেট করে মামলা এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, জাতীয়তাবাদী সমর্থক পেশাজীবীদেরও মামলা দিয়ে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। মাঠে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড না থাকলেও নতুন মামলা থেকে রেহাই পাচ্ছেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা।
জানতে চাইলে বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঢাকাপ্রকাশ’কে বলেন, ‘ নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়ে আন্দোলন উপযোগী দলকে চাঙা করার লক্ষ্যে নানা কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূলে সেই চাঙাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মামলা-হামলায় পর্যুদস্ত নেতা-কর্মীরা আবারও সংগঠিত হচ্ছেন। তখন বিনাভোটের সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশে রাজধানীসহ সারাদেশে বিএনপির সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন নতুন মামলা দিচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে তারা আবারও একতরফা একটি নির্বাচন করার পাঁয়তারা শুরু করেছে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ২০১৮ সালের মতো নয়। তাই বিএনপিকে বাদ দিয়ে একতরফা নির্বাচনের স্বপ্ন তাদের পূরণ হবে না।’
তিনি বলেন, মামলা মোকাবিলায় প্রতিদিন নেতা-কর্মীদের আদালতের বারান্দায় বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। বিএনপির আইনজীবীদের এসব মামলা সহায়তা করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। এরপর আবার নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকার বিএনপির আন্দোলন দমন করে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখতেই এসব ষড়যন্ত্র করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ঈদুল আজহার পর থেকেই বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। কয়েকদিনে তা বেড়েছে আশঙ্কাজনকভাবে বলে বিএনপি জানায়। দলটির দাবি- এতে দলটির নেতাকর্মীরা আতঙ্কে রয়েছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, হঠাৎ করে সরকার প্রশাসনের উপর চাপ বাড়িয়েছে। সরকারের ধারণা দলটি সংগঠিত হয়ে যেকোনো সময় সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে পারে। আর এ কারণেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দলটির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অনির্বাচিত সরকারের অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলে সামগ্রিকভাবে দেশ যখন অনিশ্চিয়তার দিকে যাচ্ছে তখন জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে ফের দেশব্যাপী প্রতিদিনই বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন মামলা দায়ের করা হচ্ছে। সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন নতুন মামলা দেওয়া হচ্ছে। সেই মামলা থেকে আইনজীবীরাও রেহাই পাচ্ছেন না। মূলত বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে সরকার ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করেছে।
তিনি বলেন, মামলা ও গ্রেপ্তার জালে বিএনপিকে বন্দি করার কৌশল আওয়ামী লীগের বেশ পুরোনো। এর আগেও সরকারবিরোধী আন্দোলন দমনে তারা মামলাকে বেছে নেয়। এসব মামলার বাস্তব কোনো ভিত্তি নেই। বিএনপিকে নির্মূল করাই সরকারের মূল উদ্দেশ্য।
এমএইচ/আরএ/