সরকার উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছে: মির্জা আব্বাস
উন্নয়ন ট্যাবলেট দিয়ে দেশের জনগণকে আর ভোলানো যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। সোমবার (১৮ জুলাই) ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে এক অনুষ্ঠানে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের সেমিনার কক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির রমনা থানার ১৯নং ওয়ার্ড এবং শাহবাগ থানার ২১নং ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়।
তিনি বলেন, সরকার দেশের মানুষকে উন্নয়নের ট্যাবলেট খাওয়াচ্ছে। লোডশেডিং করবেন আর উন্নয়নের কথা বলবেন। উন্নয়নের ট্যাবলেট বেশি দিন খাওয়ানো যাবে না। উন্নয়নের ট্যাবলেট খাইতে খাইতে এখন শ্রীলঙ্কা বমি কইরা দিছে, শ্রীলঙ্কা কিন্তু এখন উন্নয়নের ট্যাবলেট খায় না। সেখানে খালি উন্নয়ন বলতে বলতে সব শেষ করে দিয়ে এখন চাকরি-বাকরি গোল কইরা দেশের রাষ্ট্রপতি ভাইগা চইলা গেছে সিঙ্গাপুরে। আপনাদের যাওয়ার জায়গা আছে অবশ্য। ঠিকানা বলতে হবে না, আপনারা ঠিকানা আগেই করা আছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছে আগামীকাল (মঙ্গলবার) থেকে লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। ওইদিন বললেন যে, জনগণের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। কুইক রেন্টাল দিয়ে আপনারা বিদ্যুৎ দিয়েছেন, বিদ্যুতের আর অভাব নাই। এখন আবার বলছেন উল্টো কথা। লোডশেডিং করতে হবে। তাহলে এত টাকা দিয়ে কুইক রেন্টাল কেনো করলেন? যে কারণে বিদ্যুৎ নাই। যারা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক তারা কিন্তু বসে বসে টাকাটা পাবেন, বিদ্যুৎ থাকুক বা না থাকুক, বসে বসেই টাকা পাবেন তারা। এখন আমাদের প্রশ্ন তাহলে এত টাকা নিয়ে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট কেনো করা হলো? এত টাকা নিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে কেনো সুন্দরবনের রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা হচ্ছে?
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে কুইক রেন্টালের নামে এত চুরি করার পরেও যদি লোডশেডিং হয় তাতে আমার তো মনে হয় এই লোডশেডিংই সরকারের ক্ষমতা ত্যাগের কারণ হতে পারে। এভাবে মানুষ কিন্তু অসহিষ্ণু হচ্ছে, সাধারণ মানুষ অসহিষ্ণু হচ্ছে।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজ পত্রিকায় দেখলাম একটি খবর, ‘তলোয়ার নিয়ে আসলে রাইফেল দিয়ে প্রতিরোধ করতে হবে’। এই যে নির্বোধ ব্যক্তি (কাজী হাবিবুল আউয়াল)। আগে তো ছিল ছাগল নুরুল হুদা (কে এম নুরুল হুদা)। এখন পাডা একটা, তার (কাজী হাবিবুল আউয়াল) কোনো বুদ্ধিশুদ্ধি নাই। তলোয়ার-রাইফেল। আরে ভাই, তলোয়ার তো অনেক আগে চলে, সেই অটোম্যান সাম্রাজ্যের পরে তো আর তলোয়ার আসে নাই। আপনি তলোয়ার কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন? তলোয়ার আনবে কে? রাইফেল হাতে নেবে? এটা তাকে ঠিক করতে হবে। তিনি কী রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারবেন? সেটাও তো পারবেন না। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, এরকম এই নির্বাচন কমিশন, এই ফালতু নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি যাবে না।
কুমিল্লার সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বাহারকে ভোটের সময়ে এলাকা থেকে বের করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ব্যর্থতার সমালোচনাও করেন তিনি।
তিনি বলেন, এই সরকারের অধীনে যদি বিদেশ থেকে তৈরি করা নির্বাচন কমিশন নিয়ে আসা হয় তবুও এই সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন হবে না। এখানে পুলিশ প্রশাসন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠান যেখানে দলীয়করণ করা হয়েছে সেখানে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। সংসদ ভাঙতে হবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে গঠন করতে হবে। এরপর নির্বাচন হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিকে বিভক্ত করে দেশের উন্নয়ন করছেন। এমন উন্নয়ন করছেন যে আমরা আজ ছোট্ট একটা জায়গায় মিটিং করছি। আমাদের বাইরে মিটিং করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানের সঙ্গে বলতে চাই, আমরা কিন্তু সামনের দিনগুলোতে ঘর থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় যাবে। সব মিছিল নিয়ে যেকোনো একটা চৌরাস্তায় গিয়ে আমরা মিলিত হব। এই মিছিল রমনা, শাহবাগ, শাহজাহানপুর, ফকিরাপুল, মতিঝিল থেকে বের হবে। সবাই একসঙ্গে বঙ্গভবন কিংবা সরকারের সচিবালয় ঘেরাও করব, মনে রাইখেন। সময় আসতেছে, গুলি করবে? অনেক গুলি কিনেছেন বিদেশ থেকে।
তিনি বলেন, এই যে একটা বিমান ক্র্যাশ হলো, আমি খুব দুঃখের সঙ্গে বলছি অস্ত্রসহ একটা বিমান ক্র্যাশ হলো। এই অস্ত্র কার জন্য তারা আনতে গিয়েছিল? এ বিষয়ে একটা পরিষ্কার ব্যাখ্যা আমরা চাই।
মির্জা আব্বাস বলেন, এই যে দেশে ডলারের ক্রাইসিস। আজ বলা হচ্ছে যদি এখন বিদেশ থেকে কোনো কিছু আমদানি করতে হয় তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আমি ব্যবসা করব এটা আমার লিবার্টি। আমি এলসি খুলব, আমার ডলার যাবে, মালামাল আসবে। দেশে ডলার নাই। কেনো নাই? কারণ ট্রাংকে ট্রাংকে ভর্তি করে এই এয়ারপোর্ট দিয়ে দেশের বহু ডলার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সেইদিন পত্রিকায় দেখলাম যে, সুইস ব্যাংকে ৩-৪ হাজার কোটি ডলার রেগুলার জমা হচ্ছে। দেশের ডলার যদি সুইস ব্যাংকে চলে যায় তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে।
মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন মাহমুদের সভাপতিত্বে ও এমএ হান্নানের পরিচালনায় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও মোশাররফ হোসেন খোকন বক্তব্য রাখেন।
এমএইচ/এসজি/