মিথ্যা আওয়ামী লীগের ডিএনএতে মিশে গেছে: রিজভী
সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশকে ‘আবোল-তাবোলের’ দেশ বানাতে চাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, আওয়ামী সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, এরা জন্মগতভাবেই মিথ্যেবাদী একটি রাজনৈতিক দল। অসত্য কথা, মিথ্যাচার, অপবাদ, কুরুচিপূর্ণ কথার আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা হলে সেখানে আওয়ামী লীগ চ্যাম্পিয়ন হবে।
বর্তমান ভয়াবহ লোডশেডিংকে জায়েজ করার জন্য হরেক কিসিমের প্রতারণামূলক কথাবার্তা বলছেন আওয়ামী মন্ত্রীরা।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, জনগণের সমর্থন হারিয়ে অবৈধ আওয়ামী সরকার হিংসা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, হরিলুট, করোনাকালে দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, রেমিট্যান্স প্রবাহে বিপজ্জনক ধ্স, বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ সংকট, নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি, আমদানি-রপ্তানিতে হাজার হাজার কোটি ডলারের ভারসাম্যহীনতার মাধ্যমে আওয়ামী সরকার যে পরিস্থিতি তৈরি করেছে, সে জন্য দায়ী হচ্ছে তাদের নিজস্ব স্বার্থসর্বস্বতার ঊর্ধ্বে উঠতে না পারা। তাই এখন মিথ্যা বলা আওয়ামী লীগের ডিএনএতে মিশে গেছে।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত লুটেরা শাসকদের বড় বড় প্রজেক্ট নিয়ে বিশেষ দুর্বলতা থাকে। এতে যেমন ঢাকঢোল পিটানো যায় আবার হরিলুটও করা যায়। বিদেশি ঋণে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণের এমনকি ছোট শিশুর ঘাড়েও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ঋণের বোঝা। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু বানোনোর কতইনা বাহাদুরির গল্প শুনাচ্ছেন শেখ হাসিনা অথচ গত ১৪ বছরে চীন, জাপান ও ভারতের কাছ থেকে উচ্চ সুদে বিপুল অঙ্কে ঋণ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, স্থায়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি না করে প্রধামন্ত্রীর আত্মীয় স্বজনদের কুইক রেন্টাল স্থাপনা দেওয়া হয়েছে শুধু জনগণের টাকা লুটের জন্য। তা এখন অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণিত। এ বিদ্যুৎ প্রকল্প খাতে হরিলুট নিশ্চিত করতে করা হয়েছে দায়মুক্তি আইন (ইনডেমনিটি)। বলা হয়েছিল নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া হবে। অথচ কালবৈশাখীর ঝড় উঠলে শুধু আকাশে বিদ্যুৎ দেখা যায়, বাসা-বাড়ি ও শিল্প কারখানায় বিদ্যুৎ মাঝে মাঝে আসে, যায় না।
বর্তমানে রাজধানীর ঢাকা শহরে প্রতিদিন ৫/৬ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে রাতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। দেশের অর্থনীতিরি মস্তবড় বিষফোঁড়া এ কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্প। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে এ প্রকল্প দেশকে নিয়ে গেছে দেউলিয়াত্বের দিকে।
'বাংলাদেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিদ্যমান শ্রীলঙ্কাতেও প্রথমে শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ সংকট, তারপর সেখানে কী ঘটেছে দেশবাসী তা জানেন। বাংলাদেশেও উন্নয়নের নামে হরিলুট করে দেশ থেকে লক্ষ-লক্ষ কোটি টাকা পাচার করে দেশকে ফোকলা করে দেওয়া হয়েছে।'
রিজভী বলেন, নজিরবিহীনভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা মানুষ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বাড়ানো হচ্ছে পাল্লা দিয়ে। বিদ্যুতের জন্য যে জ্বালানির প্রয়োজন সেটি একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। উৎপাদনের রাজনীতি না করে সরকার আমদানিমুখী হলে এ অবস্থাই হয়।
তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্যাস উত্তোলন না করেও তারা আমদানির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। এখন কয়লা, গ্যাসসহ জ্বালানি সংকটে দেশে বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শ্রীলঙ্কায় একটি পরিবার ক্ষমতায় থেকে কীভাবে উন্নয়নের নামে দেশটিকে বিপজ্জনক খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছিল। এখন তাদের প্রাসাদ ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
'ভবিষ্যত নির্বাচনেও একতরফা নির্বাচন করবে সেজন্য তারা পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসন চালাবে- তার আলামত ফুঁটে উঠছে। কিন্তু এবার তারা সফল হবে না'- যোগ করেন রিজভী।
এবারের ঈদে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দেশবাসীকে- এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সড়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মাঝে মধ্যে মিডিয়ার সামনে এসে বিএনপিকে নিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন। কিন্তু ঘরমুখো মানুষের ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। ঈদের প্রাককালে ১০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা গুণতে হয়েছে জনগণকে। সড়কে দুর্ভোগের সীমা ছিল না। ৫ ঘণ্টার পথ ৩০/৩২ ঘণ্টায়ও শেষ হয়নি। যাত্রীদের দিনরাত কাটাতে হয়েছে সড়ক-মহাসড়কে।
মন্ত্রীরা বলেছেন, মহাসড়কে কোনো যানজট নেই। অথচ অনেক মানুষকে ঈদ করতে হয়েছে রাস্তাতেই। কেউ ঈদের দিন দুপুরে বাড়িতে পৌঁছতে হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের মস্তিষ্ক কোষ থেকে সত্য হারিয়ে গেছে। ঘরমুখো মানুষকে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে আর ছিল সড়কে মৃত্যুর মিছিল। এর জন্য দায়ী আওয়ামী প্রশাসন ও সড়কমন্ত্রী।
এসএন