অধিকার রক্ষায় প্রস্তুতি নিতে হবে: খন্দকার মোশাররফ
দেশকে টিকিয়ে রাখতে বেঁচে থাকার অধিকার রক্ষায় সবাইকে সোচ্চার হওয়ার প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সীমানা আইনে সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও শুধুমাত্র নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, স্বার্থের ভাগাভাগির কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পানির ন্যায্য অধিকারসহ সার্বিকভাবে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।
বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, বন্যার্তদের জন্য দুঃখপ্রকাশ করছি। পত্র পত্রিকায় উঠে এসেছে বন্যা কবলিত মানুষ কতটুকু মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে যে পরিকল্পনা থাকার কথা ছিল, বন্যা কবলিত মানুষদের সহযোগিতায় তাদের যেভাবে এগিয়ে আসার কথা ছিল, তারা তা করেনি। বরং তারা অন্য কাজে ব্যস্ত ছিল, যা আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য। কারণ জনগণের সরকার না থাকলে জনগণের জন্য কিছু করার থাকে না, থাকে ব্যক্তি-গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, দেশে যদি একটি জনগণের সরকার থাকে এবং জনগণের যদি সেই সরকারকে ভোটের মাধ্যমে পরিবর্তন করার ক্ষমতা থাকে তাহলে জনগণের ন্যায্য দাবিকে মূল্য দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু অনির্বাচিত সরকারের জনগণের প্রতি কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। তাই পানিসহ আমাদের সব ন্যায্য অধিকার আদায় করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হতে হবে। সে জন্য সবার তথ্য-ভিত্তিক জ্ঞান থাকা দরকার। আমাদের উচিত দেশের ভবিষ্যৎ আগামী প্রজন্মের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য হলেও প্রত্যেকের স্ব স্ব অবস্থান থেকে দেশের মানুষকে এ সব তথ্য উপাত্ত অবহিত করা।
সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে পানি বন্টনের ইস্যু’ শীর্ষক এই গোল টেবিল আলোচনা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন মোস্তফা কামাল মজুমদার।
বাংলাদেশের নদ-নদীর পানি প্রবাহের প্রসঙ্গ টেনে সাবেক মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘কিছুদিন আগের লোকদেখানো আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিয়ে জিআরসি মিটিং করেছেন। সেই মিটিংয়ে কী করেছেন? জয়েন্ট রিভার কমিশনের কোনো রিপোর্ট ছাড়া যে তারা লিপ সার্ভিস একটা দিলেন-এটা আসলে বাংলাদেশের মানুষকে প্রতারণা করা হযেছে।’
তিনি বলেন, ‘কারণ সবাই জানেন, বন্যায় যখন বাংলাদেশ তলিয়ে গিয়েছে, মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। কী পরিমান ক্ষতি হয়েছে এখন পর্যন্ত ভালো করে এর হিসাব দেয়া হচ্ছে না। সব গেইট ভারত এই বর্ষাকালে খুলে দিয়েছে। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন নাই তখন আমাদেরকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। যখন আমাদের পানি প্রয়োজন, আমার জীবিকা, আমার জীবন রক্ষার জন্য তখন উজানে পানি অন্যদিকে আমাদেরকে এই বাংলাদেশকে মরুকরণ করে দেওয়া হচ্ছে।’
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যে যুমনা নদীর জন্য ব্রিজ হলো এতো বড় নদীর জন্য, এখন যারা শুষ্ক মৌ্সুমে নদীর ব্রিজের উপর দিয়ে যান তারা দেখবেন নিচে দিয়ে গরুর গাড়ি যাচ্ছে-এই হচ্ছে অবস্থা। কেনো? বাঁধগুলোর কারণে। আমাদের নদীর তলদেশ গভীরতা হারাচ্ছে এবং বেসিনের গভীরতা হারাচ্ছে। আপনারা পত্র-পত্রিকায় দেখেছেন সুরমা বেসিনের তলদেশ কী পরিমান উচু হয়ে গেছে যার জন্য এবার ১২২ বছরেও এরকম বন্যা বাংলাদেশে হয় নাই। কেনেো হচ্ছে-এই বাঁধের জন্য হচ্ছে। পানি ব্যবস্থাপনার একতরফা যে সিদ্ধান্ত আমরা যারা নিচের দিকে বসবাস করি এই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে যে নতজানু নীতি তার জন্য আজকে এটা করা সম্ভব হচ্ছে।’
তিস্তা নদী পানি বন্টন চুক্তি এক দশকের না করতে পারায় সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা করেন তিনি।
সাউথ এশিয়ান ইয়ুথ রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদের সভাপতিত্বে গোল টেবিল আলোচনায় জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা ড. এস আই খান, পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এম ইনামূল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যায়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
এমএইচ/আরএ/