বন্যার্তদের পাশে থাকবে বিএনপি
দেশব্যাপী ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপির হাইকমান্ড। নির্দেশনায় বলা হয়-জনবান্ধব রাজনৈতিক দল হিসাবে এই মুহূর্তে দলের সকল পর্যায়ের সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিছুটা সীমিত রেখে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বৈঠকে বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের দায়িত্বশীল হয়ে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে সাহায্য সহযোগিতায় নিবেদিতভাবে কাজ করার নির্দেশনাও দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বিএনপির পক্ষ থেকে গঠিত ত্রাণ বিষয়ক কমিটিকে সার্বিক বিষয় মনিটরিং করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ত্রাণ কমিটির আহ্বায়ক হিেসবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘বিএনপি জনমানুষের দল। যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবার জনগণের ভোটে নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আর একটি দল আছে যারা যেনতেন ভাবে ক্ষমতায় আসতে চায়। তারা জনগণকে তোয়াক্কা করে না। ক্ষমতা, শোষণ, শাসন ও লুটপাট এগুলো তাদের একমাত্র উদ্দেশে। দেশ স্বাধীন হয়েছে জনযুদ্ধে সেটা কোনো ব্যক্তি বিশেষের একার ছিল না। অথচ আজকে সেই যুদ্ধকে হাইজ্যাক করে নিয়ে গেছে আওয়ামী লীগ। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র মালিকানা তাদের। জনগণ যে যুদ্ধ করেছে তার কোনো মূল্য নাই।’
মঙ্গলবার (২১ জুন) খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সঙ্গে বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, দেশের একটি পুরো বিভাগ পানিতে ভাসছে তাদের প্রতি যত্ন না নিয়ে অনির্বাচিত সরকার ভারত থেকে শিল্পী নিয়ে এসে আলোকস্বজ্জায় পদ্মা সেতু উদ্বোধন করাতে ব্যস্ত। বিএনপি জনমানুষের দল হিসেবে বিগত বন্যার সময়ে বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাাঁড়িয়েছে এবারও দাঁড়িয়েছে।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, সিলেট মহানগর, সুনামগঞ্জ পৌরসভা, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছেন। বড় বড় নৌকা ভাড়া করে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে প্রায় আমাদের শ' খানেক নৌকা কাজ করছে। ছাতকে বন্যাকবলিত এলাকায় নেতা-কর্মীরা নিজেরা ১০ লাখ টাকা তুলে মানুষের মাঝে বিতরণ করেছে। এভাবে গণমানুষের দল হিসেবে আমরা মানুষের পাশে আছি।
বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে টুকু বলেন, এবারের বন্যা পরিস্থিতিকে আমরা তিনভাবে ভাগ করেছি। এখন যারা পানিবন্দি মানুষজন আছেন তাদের উদ্ধার করে তাদের কাছে খাবার পৌঁছিয়ে দেওয়া। বন্যা পানি চলে গেলে মানুষজনের গৃহ নির্মাণ, তাদের খাবার-দাওয়া ও ওষুধপত্র বিতরণ করা হবে। কৃষি জমি তলিয়ে গেছে বন্যায়। পানি নেমে গেলে কৃষকরা যাতে চাষাবাদ করতে পারে সেজন্য বীজতলা তৈরি করে তাদের সরবারহ করা হবে।
ড্যাব ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন রোগ বালাইয়ের চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ বিতরণ, বিশুদ্ধ পানির ট্যাবলেট বিতরণ করবে। আমরা চেষ্টা করব সকল বন্যার্তদের পাশে পৌঁছানোর।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতিতে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভয়াবহ বন্যা ও নদীভাঙন মোকাবিলায় সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না থাকায় বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। নদীভাঙনে গৃহহারা মানুষ খাদ্য, বস্ত্র ও চিকিৎসার অভাবে দুর্বিষহ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান বলেন, সরকার বন্যার্তদের জন্য ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বন্যার্তদের মধ্যে এ অর্থ ভাগ করে দিলে সবার ভাগে দেড় টাকা করে পড়বে। এর মাধ্যমে তারা (সরকার) বন্যার্তদের সঙ্গে তামাশা করছে, দেশের মানুষের সঙ্গে তামাশা করছে। সিলেট, উত্তরাঞ্চলসহ সারা দেশের বন্যার্তদের পাশে থাকবে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীরা বন্যা কবলিত মানুষদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ শুরু করেছে।
এদিকে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বানভাসী অসহায় মানুষদের সাহায্য-সহযোগিতায় তিনটি কমিটি গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। কমিটি গুলো হচ্ছে সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটি, মনিটরিং সেল কমিটি, ত্রাণ সেল কমিটি।
বন্যার্তদের সাহায্যর্তে সার্বি ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কমিটি এবং এর অধীনে আরও ৩ উপ-কমিটি গঠন করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। দলটির পক্ষ থেকে ইতিমদ্যে ২০ জুন পর্যন্ত সিলেট জেলায় মোট ৪৩৫০ টি পরিবারের মাঝে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। সিলেট মহানগরে ১৩৫৫০ পরিবারের মাঝে সহহায়তা প্রদান করা হয় এবঙ সুনামগঞ্জ জেলায় ৩০০০ পরিবারের মাঝে সহায়তা প্রদান করা হয়। ২০৯০০ পরিবারের সহায়তার মধ্যে রয়েছে- শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ, তৈরি খাবার বিতরণ, বিশুদ্ধ পানি বিতরণ, নগদ অর্থ প্রদান।
বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের মানুষ ডুবে যাবে আর আপনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রীত্ব করবেন এটা দেশের মানুষ মেনে নেবে না। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির জন্য দায়ী আপনি প্রধানমন্ত্রী। অন্য কেউ দায়ী নয়, জনগণকে ক্ষুধায় রেখে অনাহারে রেখে পানিতে ডুবিয়ে আপনি ঝাড়বাতির আলোয় পদ্মা সেতু দেখাবেন আর ভারত থেকে আপনি নাচনিওয়ালি নিয়ে এসে সেখানে নাচাবেন এটা দেশের মানুষ আর মেনে নেবে না।
এদিকে বন্যা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বন্যা মোকাবিলায় সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সিলেট অঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সহায়তা দেওয়া হবে। বন্যা আসাটা আমার মনে হয় ঘাবড়ানোর কিছু নাই। বাংলাদেশের মানুষকে সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করেই চলতে হবে। অবকাঠামোগুলোও সেভাবে তৈরি করতে হবে। মঙ্গলবার ২১ জুন বাসভাসিদের দেখতে সিলেট গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
এমএএইচ/এমএমএ/