স্বেচ্ছাসেবক দলে স্থবিরতা-১
৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটির তদবির!
নতুন কমিটি নয় পূর্ণাঙ্গ কমিটি চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ১৯৩ জনের নামের তালিকা পাঠিয়েছে স্বেচ্ছাসেবক দল। এ তালিকার সবাই নেতা। তাদের প্রত্যেককে দেওয়া হচ্ছে পদ-পদবি। নির্বাহী কমিটির সদস্য বলতে কিছু নেই। এর মধ্যে পেরিয়ে গেছে পাঁচ বছর। দলের ভেতরে দাবি উঠেছে নতুন কমিটি গঠনের।
দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কমিটিতে আরও কয়েকজনকে যুক্ত করা প্রয়োজন। কিছু ত্যাগী ও নিবেদিতরা কমিটিতে জায়গা পায়নি। যেকোনো সময় এটা সংগঠনের জন্য বুমেরাং হয়ে উঠতে পারে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রস্তাব পাঠাতে বলেছেন। এরপর ১৯৩ জনের নামে তালিকা পাঠানো হয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের বর্তমান কমিটি গঠিত হয় ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর। সংগঠনটির সাত সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটিও গঠন করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মেয়াদ দুই বছর। কিন্তু এখনও পূর্ণাঙ্গ বা নতুন কমিটি সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। উপদেষ্টাসহ ১৮৬ জন। এর মধ্যে সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবু করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছয় নেতা ১৯৩ জনের নামের তালিকা তৈরি করেছেন।
গতিহীন অবস্থা বিরাজ করছে সংগঠনটিতে। সংগঠনকে গতিশীল করতে ২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ১২টি সাংগঠনিক টিম গঠন করেছিলেন বিএনপির হাইকমান্ড। কিন্তু সংগঠন গোছানোর কাজ শেষ করতে পারেনি। এর জন্য করোনা পরিস্থিতিকে দায়ি করা হচ্ছে। তবে সংগঠনের নেতাদের দাবি তারা ৯৮ শতাংশ সফলতার সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে, সংগঠনটির শীর্ষ দুই নেতা ও সাংগঠনিক টিমের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সারওয়ার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, বর্তমান কমিটি বর্ধিত করতে তালিকা পাঠানো হয়েছে। কমিটি পূর্ণাঙ্গ নাকি অন্য কিছু হবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার একমাত্র এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবক দলের এক সহসভাপতি ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, নিষ্ক্রিয় কমিটিতে থাকার চেয়ে সাবেক নেতা হিসেবে থাকাটা সম্মানের। কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত সব নেতা অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে দলকে সংগঠিতভাবে দুর্বল করে দিচ্ছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের নেতাদের বিরুদ্ধে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অর্থ কেলেঙ্কারি, এমনকি নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠে এসেছে। এরপরও তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, কারণ অর্থ ও বাণিজ্যের মূল হোতা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজেরাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ বাড়াতে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতৃত্ব। ইচ্ছে করেই সংগঠন গোছানোর কাজ অসমাপ্তই রাখা হচ্ছে। ফলে সাংগঠনিক টিমের নেতারা কমিটির খসড়া তৃণমূল থেকে দপ্তরে জমা দিলেও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজের মতো কমিটি অনুমোদন দেন। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষুব্ধ, এমনকি একাধিক জেলা ও উপজেলার কমিটি ঘোষণার পরও কমিটি স্থগিত করার ঘটনাও ঘটেছে। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দিয়ে অবিলম্বে স্বেচ্ছসেবক দলের নতুন কমিটি গঠনের দাবি সংগঠনের তৃণমূল ও পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের।
স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি স্বেচ্ছাসেবক দলের যে কমিটি দেওয়া আছে সেটাতেই আরও কিছু নাম কীভাবে সংযুক্ত করা যায়। সেইজন্য আমরা একটি খসড়া তালিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠিয়েছি। তিনি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেবেন। আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কথা বলতে গেলে অনেক দূরে যেতে হয়। কিন্তু যেহেতু সংগঠনের যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের লন্ডনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সেক্ষেত্রে কমিটি থাকা না থাকা একই কথা। এখন নতুন কমিটি প্রয়োজন। সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুর পর থেকে দলে চেইন অব কমান্ড নেই। সমন্বয়হীনতা ও দায়সারা অবস্থায় চলছে সংগঠন। নেতৃত্বে গতিশীল পরিবর্তন না হলে সংগঠন স্থবির হতে বাধ্য। যার বড় প্রমাণ, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ৯ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের তুলনামূলক কম উপস্থিতি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, নতুন কমিটি নয়, আমরা বর্তমান কমিটিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপদানের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে একটি তালিকা পাঠিয়েছি। এখন উনার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।
এসএন