১৪ দলের ৪ ঘণ্টার বৈঠক
নেতারা জানালেন ক্ষোভের কথা, নেত্রী দিলেন আশ্বাস
দীর্ঘ প্রায় তিন বছর পর ১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন পর সামনা-সামনি পেয়ে নিজেদের ক্ষোভের কথা তুলে ধরলেন জোটের নেতারা। তবে নেতাদের নিরাশ করেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি। আগামী নির্বাচনও ১৪ দল জোটবদ্ধভাবে করবে এমনটাই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছেন জোটের নেতারা। সামনে রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ১৪ দলীয় জোটের কর্মপন্থা ঠিক করতেও ঐক্যমত হয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) গণভবনে বেলা সাড়ে ১১টায় ১৪ দলীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক শুরু হয়ে চলে টানা চার ঘণ্টা। বিকাল সাড়ে ৩টায় বৈঠক শেষ হয়।
চার ঘণ্টার বৈঠকে জোটের নেতাদের সঙ্গে নাস্তাও করেন প্রধানমন্ত্রী। এই বৈঠকে দীর্ঘ দিন জমে থাকা ক্ষোভগুলো জোট নেত্রীর কাছে তুলে ধরেন ১৪ দলের নেতারা। আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সাম্প্রদায়িক ঘটনা, হেফাজতের তাণ্ডব, আহমদীয়া সম্প্রদায়কে অমুসলীম ঘোষণার দাবি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যু।
বৈঠকের অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা ঢাকাপ্রকাশকে জানান, মূল কথা ছিল আমাদের আদর্শিক যে জোট সেই জোটকে সক্রিয় করা। আগামী নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট ঐক্যবদ্ধ থাকবে। নির্বাচনের আগে অন্য কোনো দল আসলেও আসবে। না আসলেও ১৪ দলীয় যে জোট সেটা ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
বৈঠকে ১৪ দলের একজন নেতা বলেন, ১৪ দলীয় যে জোট সেটি আদর্শিক জোট। দীর্ঘদিন এই জোট সক্রিয় নেই। জোট থাকলেও কোনো কার্যক্রম নেই। কিছুদিন আগে হেফাজত যে তাণ্ডব চালিয়েছে সেটি প্রতিহত করতে ১৪ দলীয় জোট কোনো ভূমিকা রাখেনি।
আর এক নেতা বলেন, আমরা জোটগতভাবে নির্বাচন করলাম। এরপর বিজয়ী হয়ে আমাদের বিরোধীদল বানিয়ে দিলেন। দূরে ঠেলে দিলেন। আবার বিরোধী হয়েও ৭২ অনুচ্ছেদের কারণে সঠিকভাবে ভূমিকা রাখতে পারছি না।
জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, গত নির্বাচনের পর এক প্রেক্ষাপটে আপনাদের বিরোধীদল হিসেবে শক্তিশালী হতে বলেছিলাম। পরবর্তীতে আমাদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগামীতে বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন নেতা জানিয়েছেন, আগামীতে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হলে সেখানে ১৪ দলের নেতাদের অন্তর্ভুক্তিরও ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতাবিরোধী জোট বিএনপি-জামায়াতকে মোকাবিলা করার জন্য ১৪ দলীয় জোট সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখবে বলে বৈঠকে সবাই একমত হয়েছে। সেইসঙ্গে আর যাই হোক আগামী নির্বাচন জোটগতভাবেই হবে এটা সবাই একমত হয়েছেন বলে এক নেতা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ১৪ দলের নেতাদের বৈঠকে সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়। ১৪ দলের নেতারা নিত্যপণ্যের বাজারের অস্থির পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, ১৪ দলের নেতারা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে রেশনিং পদ্ধতি চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আগে ৫০ লাখে পরিবারকে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এখন আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এক কোটি পরিবারকে নিত্যপণ্য দেওয়া হবে। এ জন্য টিসিবিকে বলে দেওয়া হয়েছে কার্ড প্রথা চালু করার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে গেলে ডিলার নিয়োগ দিতে হবে, আরও নানারকম জটিলতা আছে। তাই টিসিবির মাধ্যমে পরিবার প্রতি একটি করে কার্ড দেওয়া হবে।
১৪ দল নেতারা মধ্যবিত্তদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, টিসিবির কার্ডের ক্ষেত্রে তাদের বিষযটিও বিবেচনা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে নিতপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়াসহ অন্য নেতারা।
আরও পড়ুন>>
ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে ১ কোটি মানুষ পাবে বিশেষ কার্ড
বিএনপির নেতৃত্ব কে দেবে প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
এসএম/এপি/আরএ/