দেশের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করছে সরকার: মির্জা ফখরুল
দেশের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করেছে এই সরকার। বেঁচে থাকার অধিকার ভোটাধিকার, কথা বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে আমাদেরকে পুরোপুরিভাবে ক্রীতদাসে পরিণত করবার জন্য যা প্রয়োজন তার সবই করছে এই সরকার; বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী তাঁতীদল এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।
এসময় তাঁতী দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, 'আমরা যেমন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছি, তেমনি আমাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠায় আমরা রাজপথে নামবো।
দলের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, 'সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন, দেশের সমস্ত মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার মাধ্য দিয়ে একটি দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে ফ্যাসিবাদী, ভয়াবহ কর্তৃত্ববাদী, স্বৈরাচারী ও খুনি সরকারকে পরাজিত করে একটা জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি।'
তিনি বলেন, 'জনগণের সরকার করতে হলে অবশ্যই একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর নিরপেক্ষ সরকার করতে হলে নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নিরপেক্ষ সরকার লাগবে। এটা আওয়ামী লীগের অধীনে হবে না।'
নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি নতুন নাটক শুরু করেছে। তারা নাকি এখন বিভিন্ন স্তরের পেশার লোকদের সঙ্গে কথা বলবে? গত পরশু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০ শিক্ষকে আলোচনায় অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কিন্তু এসেছেন মাত্র ১৩ জন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেছেন, এই তামাশা কেন করছেন? নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ সরকার না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, যে কোনো চিন্তাশীল মানুষ যারা দেশকে ভালোবাসেন তারা জানেন এখন যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে একটা জনগণের সরকার।
মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, কথায় কথায় আপনারা বলেন বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর হয়ে গেছে। দেশ থেকে টাকাপয়সার লুট আপনারা সিঙ্গাপুর-কুয়ালালামপুরে বাড়িঘর তৈরি করেছেন। আপনাদের উন্নতি হচ্ছে তাই আপনারা ভাবছেন দেশের উন্নতি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আরাম আয়েশে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিস, বাড়ি, গাড়িতে বসে কথা বলা সহজ। মানুষের কাছে এসে না দেখলে তাদের অভাব বুঝা সহজ নয়। রাস্তায় বেরিয়ে এসে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।
বিএনপি মহাসচিবকে সর্বজান্তা ও মাতাব্বর বলে তথ্যমন্ত্রী যে মন্তব্য করেছেন তার তীব্র সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, 'এটি একটি অশালীন ভাষা, মাতব্বরি করার ভাষা, প্রশ্ন এটা নয়, উনাকে এটা জানতে হবে। তবে বলতে পারতেন বিশেষজ্ঞের মতো করে কথা বলছি। আমরা যারা অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেছি অর্থনীতির ছাত্র ছিলাম শিক্ষকতা করেছি, প্রকৃত আয় প্রকৃত ব্যয় এই বিষয়গুলো ভালো বুঝি।'
মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিয়ে সরকার ভুল হিসাব করছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ ৯০ ভাগ মানুষের মাসিক আয় কোনভাবেই ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়। গার্মেন্ট সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের মাসিক ১৫ হাজার টাকা, আর আমাদের যারা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী আছেন, মন্ত্রী , সরকারি কর্মকর্তারা আছেন তাদের আয় কিন্তু অনেক বেশি। হাজার হাজার কোটি টাকা আয়ও আছে আওয়ামী লীগ নেতাদের। কাজেই এখন যাদের মাসিক এক কোটি টাকা এবং যার মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা তাহলে মাথাপিছু আয় কি সমান, সমান হচ্ছে? শুভঙ্করের ফাঁকি দিয়ে মানুষ কে বোকা বানিয়ে আর কতদিন চলবেন বলে প্রশ্ন করেন মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশকে দুর্ভিক্ষের মধ্যে ফেলে দিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। তখন না খেতে পেয়ে মানুষ মারা গেছে। লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় না পেয়ে বাসন্তীকে মাছ ধরার জাল পরতে হয়েছে। আজকে সেই একই অবস্থা শুরু হয়েছে। মা তার সন্তানকে খাবার দিতে না পেরে মুখে বিষ তুলে দিয়ে নিজে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করছে। ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিচ্ছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করছে।
এমএইচ/কেএফ/