ব্যর্থদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটিতে ঝুঁকছে বিএনপি
ছবি: সংগৃহীত
মেয়াদোত্তীর্ণ দলের জেলা, মহানগর এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করে ব্যর্থদের বাদ দিয়ে তারুণ্যনির্ভর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে গত বৃহস্পতিবার রাতে একযোগে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম এবং বরিশাল মহানগর এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
এদিকে বিএনপির খুলনা, কুমিল্লা ও গাজীপুর মহানগরসহ অন্তত আরও সাতটি জেলা কমিটি যে কোনো সময় ভেঙে দেওয়ারও আভাস দিয়েছে দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ছাড়া গাজীপুর জেলাসহ আরও কয়েকটি কমিটি পুনর্গঠন করার কথাও জানানো হয়।
অন্যদিকে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কেন্দ্রীয় মহিলা দল, তাঁতী দল, মৎস্যজীবী দল ও শ্রমিক দলের কমিটিও ভেঙে নতুন কমিটি দেওয়ার ঘোষণা এসেছে। এ ছাড়া জাসাসেরও নতুন কমিটি যে কোনো সময় ঘোষণা হবে। পাশাপাশি সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদলের ৭ সদস্যের কমিটির আকারও বাড়ানো হবে- এমন প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, দলের আস্থাভাজন, শারীরিকভাবে সুস্থ, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ভূমিকা রাখতে পারবে এবং রাজনৈতিকভাবে সচেতন- এমন নেতাদের নতুন কমিটিতে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব কমিটির মেয়াদ আছে; কিন্তু সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বিগত আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না, তাদের কমিটি থেকে সরিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দিয়ে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। সে অনুযায়ী একটি তালিকাও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে দেওয়া হয়েছে। দলের
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে সরকার পতনের আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের কার কী সফলতা-ব্যর্থতা ছিল, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছিল। ওই প্রতিবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর দল পুনর্গঠনে হাত দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আমাদের সময়কে বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত আগেই ছিল, এখন তা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এটি একটি সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, এর বেশি কিছু নয়। তিনি বলেন, কমিটি গঠনে যোগ্য ও ত্যাগীদের মূল্যায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আশা করি, যোগ্য ও ত্যাগীরা নেতৃত্বে আসবেন।
দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানান, আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতা সংক্রান্ত দলের প্রতিবেদনকে অনুসরণ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সারাদেশের জেলা ও মহানগর কমিটি এবং কেন্দ্রীয় অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন-সংক্রান্ত কাজ শুরু করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের নেতাদের মতামতও নেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি পৃথক বৈঠক করেছেন তারেক রহমান। সেখানেই নতুন কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নেতাদের সহযোগিতার নির্দেশনা দেন তিনি। বিএনপির চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি গঠনের কথা আগেই জানিয়ে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দলের মহাসচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতাকে জানানো হয়েছে। নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা মহানগরের সাবেক নেতাদের এখনো সম্পৃক্ত করা হয়নি। তবে বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ একযোগে পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ কমিটি ভেঙে দেওয়া নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে নানা আলোচনা তৈরি হয়েছে। অনেকে মনে করেন, আন্দোলনে ব্যর্থতা ও সংগঠন গতিশীল করতে না পারায় কমিটিগুলোর নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ দলের শীর্ষ নেতা। বলা যায়, এক ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি।
দলের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত বছর জুলাই থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থানের কর্মসূচি সফল না হওয়ায় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নগর কমিটিগুলো দলের মধ্যে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব নিয়ে তখনই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এর কয়েকদিনের মধ্যেই ছাত্রদল সভাপতির পদ থেকে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে ‘অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে’ সরিয়ে দিয়েছিলেন তিনি, যা দলের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। একই সঙ্গে সবশেষ ঢাকার নয়াপল্টনে ডাকা মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার ঘটনায় নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা হয়। এ অবস্থায় বিলুপ্ত পাঁচ কমিটিতে কারা নেতৃত্বে আসছেন, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।
ঢাকা মহানগর উত্তর : নতুন কমিটির শীর্ষ পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন- বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সদ্য বিদায়ী কমিটির মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমিনুল হক, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সহ-সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সদ্য বিদায়ী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, যুবদলের সাবেক সহসভাপতি এসএম জাহাঙ্গীর প্রমুখ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে কথাও বলেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ : দক্ষিণে নতুন কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় আছেন- বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, হাবিবুর রশিদ হাবিব, সদ্য বিদায়ী কমিটির মহানগর দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, যুগ্ম আহ্বায়ক তানভীর আহমেদ রবিন, সদস্য প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
চট্টগ্রাম মহানগর : এ মহানগরে আলোচনায় আছেন- সদ্য বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন, সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, যুগ্ম আহ্বায়ক এমএ আজিজ, এসএম সাইফুল ইসলাম, নাজিমুর রহমান, সদস্য এরশাদ উল্লাহ, চট্টগ্রাম মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তীসহ ডজনখানেক নেতা।
বরিশাল মহানগর : এ সাংগঠনিক জেলার নতুন কমিটিতে শীর্ষ পদে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন- বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, সদ্য বিদায়ী কমিটির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক, যুগ্ম আহ্বায়ক জিয়াউদ্দিন শিকদার, সদস্য আফরোজা খানম নাসরীন, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, সাবেক আহ্বায়ক মজিবুর রহমান নান্টুসহ ডজনখানেক নেতা। এর মধ্যে গত আন্দোলনে আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, জিয়াউদ্দিন শিকদার ও আফরোজা খানম নাসরীন রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। কারাগারে ছিলেন মনিরুজ্জামান ফারুক, তিনিও ত্যাগী নেতা।
কেন্দ্রীয় যুবদল : যুবদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির শীর্ষ পদে যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন- সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতাদের মধ্যে সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্না, সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, সাবেক নেতা এসএম জাহাঙ্গীর, সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, গোলাম মাওলা শাহীন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, সদস্য সাঈদ ইকবাল টিটু। শীর্ষ পদে বিশেষভাবে আলোচনায় আছেন- ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, সাবেক সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ। এসব নেতার সঙ্গেও বিভিন্ন সময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কথা বলেছেন।
সূত্র: আমাদেরসময়