আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে: ফখরুল
প্রয়োজন হলে আরেকটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশকে মুক্ত করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে মুক্ত করতে হবে। আমাদের যুদ্ধ শুধু বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসানোর জন্য নয়। আমাদের যুদ্ধ আমাদের অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য।দেশের মালিক এ দেশের মানুষ, মানুষের সেই অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই আমাদের যুদ্ধ। আমরা ভোট দিতে চাই দেশের মানুষ ভোট দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্ব নির্বাচিত করতে চায়। আর সরকার কখনই সেই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার পক্ষে নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে কারণ তারা জানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে কখনোই বিজয়ী হতে পারবে না তারা।’
রবিবার (৬ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধ তখনই সম্ভব হবে, যখন দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার আসবে। মানুষের নিরাপত্তা স্বাস্থ্য চিকিৎসা শিক্ষা নিশ্চিতকরণ তখনই সম্ভব হবে যখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে। এবং সেই সরকারকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হতে হবে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে যে বিষয় নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ সেটা বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যেকের অন্তরের কথা যে, আমরা আর পারছি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে এতে করে আমাদের জীবন যাপন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটাই কারণ সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি। আজকে তারা দুর্নীতি করে ফুলে-ফেঁপে বড় হচ্ছে। সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কারণ ঈদের যারা ব্যবসা করে তারা সকলেই আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী। গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে কারণ হচ্ছে এলপিজি গ্যাস বিদেশ থেকে আমদানি করে নিয়ে আসার পেছনে তাদের শিল্প উপদেষ্টা জড়িত। ওষুধের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি কোন বিচার হচ্ছে না। চাঁদপুর বিশ্ববিদ্যালয় কে কেন্দ্র করে জমি অধিগ্রহণে শিক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কোন বিচার হয় না।’
করোনার পরে দেশের শতকরা ২ ভাগ দারিদ্র বেড়ে গেছে। কর্মসংস্থান হচ্ছে না। কর্মহীন অবস্থায় আছে প্রায় ৬ কোটি মানুষ। যা স্বীকার না করে সরকার বলছে উন্নয়ন উন্নয়ন।
বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য ক্রয়ে সাধারণ মানুষের মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। আজকে বাংলাদেশকে এমন একটি জায়গায় আওয়ামী লীগের সরকার নিয়ে গেছে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ এখন বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না। অতিষ্ঠ হয়ে গেছে জীবন। বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম যে খাবার সেটা কিনতে পারছে না। বেঁচে থাকার জন্য যে নিরাপত্তা দরকার সে নিরাপত্তা পাচ্ছে না। বরং আমরা যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দেশব্যাপী কর্মসূচি পালন করছি তখন সরকারের টনক নড়েছে তারা জেলা-উপজেলায় আমাদের কর্মসূচিগুলোতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে, বাধা দিচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত সরকার যারা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। তাদেরকে সরাতে হবে একটা গভীর চক্রান্ত আছে সেই চক্রান্ত হচ্ছে এদেশের মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে তারা একটা রাজতন্ত্র তথাকথিত মুজিববাদের দেশ এখানে চালু করবে।’
তিনি বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগ সরকার যতবার ক্ষমতায় এসেছে ততবারই তারা বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নকে চুরমার করে দিয়েছে। ৭২ থেকে ৭৫ তারা একই কাজ করেছে এবং শেষ পর্যন্ত জনগণ যখন বিদ্রোহ করতে শুরু করেছে, প্রায় ৩০ হাজার তরুণকে হত্যা করেও সেই বিদ্রোহ সামাল দিতে পারে নাই, তখন তারা একদলীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা বাকশাল কায়েম করেছে। আজকে ও একই ঘটনা ঘটছে, এবার শুধু চেহারাটা আলাদা, মোরগ আলাদা, গণতন্ত্রের মোড়ক লাগিয়েছে কিন্তু ভিতরে ভিতরে সমস্তটাই একদলীয় বাকশাল ব্যবস্থা।’
‘আজকে স্কুল কলেজগুলোতে বেতন বৃদ্ধি পাচ্ছে উপরন্তু এমন এমন হেডমাস্টার হেডমিস্ট্রেস অথবা ভাইস চ্যান্সেলর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে যারা চোর চুরি করে সারাক্ষণ। বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে চুরির আখড়ায় পরিণত হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
ছাত্রদল নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই দেশে যা কিছু কল্যাণকর যা কিছু মহৎ সবকিছু ছাত্ররাই করেছে তাই ছাত্রদেরকে আবারও তাদের পুরনো ঐতিহ্য নিয়ে এসে সমস্ত অচলায়তন ভেঙে ফেলতে হবে। থেকে উঠতে হবে, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষকে সামনে নিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো কিছু বুঝি না। শুধু একটি কথাই বুঝি এখানে একটা নির্বাচন দিতে হবে। যে নির্বাচন হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, সে জন্য বলছি আগে পদত্যাগ করুন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। সেই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে এখানে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা হবে। এটাই হবে বাংলাদেশের জন্য ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়িত করা। কারণ সব জায়গায় আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন।’
ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, সাবেক ছাত্রনেতা আমান উল্লাহ আমান, আসাদুজ্জামান রিপন, খায়রুল কবির খোকন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, নাজিম উদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশের সঞ্চালনা করেন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল।
এমএইচ/এমএমএ/