রাষ্ট্র নিয়েই তো বিএনপির প্রত্যাশা নেই: তথ্যমন্ত্রী
রাষ্ট্র নিয়েই তো বিএনপির প্রত্যাশা নেই, সেখানে রাষ্ট্রপতি নিয়ে কোনো আশা প্রকাশ করার কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ‘বর্তমান রাষ্ট্রপতিও একজন ভালো মানুষ। কিন্তু বিএনপি গতকাল যে বক্তব্য রেখেছে, আসলে রাষ্ট্র নিয়েই তো তাদের প্রত্যাশা নেই, রাষ্ট্র নিয়ে তারা হতাশ। সেখানে রাষ্ট্রপতি নিয়ে কোনো আশা প্রকাশ করার কারণ তো আমি দেখি না।’
মঙ্গলবার (২৫ এপ্রিল) সচিবালয়ে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট প্রকাশিত ‘পূর্ব পাকিস্তানের সংকট সম্পর্কে শ্বেতপত্র’ বইয়ের পুনর্মুদ্রিত সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।
সোমবার নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ ও আগের রাষ্ট্রপতির বিদায় নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, গতকাল একজন রাষ্ট্রপতি পরপর দুবার দায়িত্ব পালন করে সফলভাবে সসম্মানে বর্ণাঢ্য বিদায় নিয়েছেন। আরেকজন রাষ্ট্রপতি শপথ গ্রহণ করেছেন। অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সাদামাটা, কিন্তু অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
তিনি বলেন, ‘এই যে ক্ষমতা হস্তান্তর, দায়িত্ব হস্তান্তর...শান্তিপূর্ণভাবে মর্যাদার সঙ্গে বর্ণাঢ্যভাবে সসম্মানে যে হস্তান্তর, এটি গণতান্ত্রিক রীতি-নীতি চর্চার ইতিহাসে নতুন মাইলফলক যুক্ত করেছে। বিএনপি বিদায়ী রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে একটি কথা বলেছে, তিনি একজন ভালো মানুষ।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম তো রাষ্ট্র নিয়ে হতাশ। তা নাহলে তিনি বলতে পারেন যে, পাকিস্তানই ভালো ছিল। পাকিস্তান ভালো ছিল এটা বলার মধ্য দিয়ে এটাই তো প্রকাশ পায় যে তারা রাষ্ট্র নিয়েই হতাশ। কাজেই রাষ্ট্রপতি নিয়ে কোনো আশা প্রকাশ করার কারণ নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, যারা রাষ্ট্র নিয়ে হতাশ তারা রাষ্ট্রপতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি মনে করি নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি একজন বিচক্ষণ, প্রাজ্ঞ ও বুদ্ধিমান মানুষ। সংকটে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতি হিসেবে, তিনি রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে অতীতের মতোই সুচিন্তিতভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। আমি দৃঢ়ভাবে সেটি বিশ্বাস করি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন আওয়ামী লীগে অনেক ভালো নেতা ছিল। তাদের রেখে একজন অচেনা মানুষকে রাষ্ট্রপতি করা হয়েছে-এ বক্তব্যকে কীভাবে দেখছেন-জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দেয় আওয়ামী লীগ। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে সেটি কী বিএনপি ঠিক করে দেবে। আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে, সেটি তো আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত।
সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা যখন ইয়াজ উদ্দিন সাহেবকে রাষ্ট্রপতি বানায়, তখন তাকে কয়জন চিনত। আব্দুর রহমান বিশ্বাস উনি ১৯৭১ সালে শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন, তাকে কয়জন চিনত। বরিশাল থেকে নিয়ে এসে তাকে রাষ্ট্রপতি বানানো হয়েছিল। জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতা দখল করেন, জিয়াকে কয়জন চিনত।’
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে গণহত্যার স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস)। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, আমি মনে করি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএজিএস যে ঘোষণা দিয়েছে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধে যে গণহত্যা হয়েছে আন্তর্জাতিকভাবে সেটির স্বীকৃতি পাওয়ার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে। রুয়ান্ডাসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যা হিসেবে যেসব স্বীকৃতি পেয়েছে, সেখানে এত মানুষ মৃত্যুবরণ করেনি। কিন্তু সেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। আমাদের সরকার এ নিয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই ঘোষণা অত্যন্ত সহায়ক হবে।
মোড়ক উন্মোচন করা বই নিয়ে মতথ্যন্ত্রী বলেন, এ বই আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক হবে। পাকিস্তানিরা কী মনে করতো বা মুক্তিযুদ্ধকে কীভাবে দেখতো-সেটির ক্ষেত্রে পাকিস্তান সরকার ১৯৭১ সালের ৫ আগস্ট এ স্বেতপত্র প্রকাশ করেছিল। এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে।
সম্প্রতি ইউরোপ সফরে কয়েকটি চুক্তি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদেরকে তারা ১৫৬টি ডকুমেন্ট হস্তান্তর করবে। সেগুলো আমরা কিনে নিচ্ছি। সংগ্রহের পর এগুলো যখন কম্পাইল করা হবে, তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কারও কোনো সুযোগ আর থাকবে না। আমরা সেই কারণেই এ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
এনএইচবি/এমএমএ/