‘হজ খরচ ১১ হাজার টাকার কিছু বেশি কমানো জনগণের সঙ্গে তামাশা’
ফরজ ইবাদত হজ পালনে আল্লাহর মেহমান হজ্জ যাত্রীদের অস্বাভাবিক বিমানভাড়া ও একই খরচ একাধিকবার তুলে দিয়ে প্রায় ৭ লাখ টাকার ভৌতিক হজ প্যাকেজ অবিলম্বে সংশোধন করে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা না হলে দেশের জনগণ বিমান এমডি, ধর্মপ্রতিমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগে দেশের জনগণ মাঠে নামতে বাধ্য হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি শহিদুল ইসলাম কবির।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদ সভাপতি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল ১১ হাজার টাকার কিছু বেশি যে খরচ কমানো হয়েছে তা জনগণের সঙ্গে তামাশা ছাড়া আর কিছুই না।’
শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে জেদ্দার দূরত্ব সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার হলেও ওমরায় ৮০ হাজার টাকার বিমান ভাড়া খোড়া অজুহাত দেখিয়ে হজে ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকারও বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে। যা হাজীদের উপর জুলুম ও অমানবিক আচরণ।’
অথচ ভারতে সরকারিভাবে এয়ার ইন্ডিয়া কোলকাতা থেকে জেদ্দা পর্যন্ত বিমান ভাড়া সরকারী ৪৫ থেকে ৫০ হাজার রুপি, বেসরকারিভাবে ১ লাখ টাকা। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে জেদ্দা আকাশ পথে দূরত্ব ৭ হাজার কিলোমিটার। সৌদি এয়ারলাইন্স এ ভাড়া ৪ হাজার রিঙ্গিত যা বাংলাদেশি টাকায় ১ লাখ টাকা। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৮ হাজার কিলোমিটার, বিমান ভাড়া ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের লসঅ্যাঞ্জেলস থেকে জেদ্দার দূরত্ব ১৩ হাজার ৩৯৫ কিলোমিটার। বিমানে সময় লাগে ১৫ ঘন্টা ২০ মিনিট। যার বিমান ভাড়া ১৭০০ ডলার যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে জেদ্দা শহরের দূরত্ব ১০ হাজার কিলোমিটারের বেশি। রয়েল জর্ডান এয়ারলাইন্স এ ভাড়া ৭৮০ ডলার বাংলাদেশি টাকায় ৮০ হাজার টাকা। গতবছরের হজ এ সৌদি এয়ারলাইন্স এ টিকেট কেনা হয়েছে ১৮০০ ডলারে। আয়ারল্যান্ড থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৬ হাজার ৭৭৯ কিলোমিটার। বিমান ভাড়া ৮০ থেকে ৮৫ হাজার টাকা। জার্মানির বার্লিন থেকে সৌদি আরবের জেদ্দার দূরত্ব ৫ হাজার ৩৪০ কিলোমিটার। ফ্রাঙ্কফুট থেকে জেদ্দার দূরত্ব ৫৪৮০ কিলোমিটার। বিমান ভাড়া ৫৭১ থেকে ৮৫০ ইউরো। যা বাংলাদেশি টাকায় ৬০ থেকে ৯০ হাজার টাকা।
বিভিন্ন দেশের বিমান ভাড়া এবং বাংলাদেশের বিমান এমডির দাবি প্রমাণ করে তারা সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে প্রায় ২ লাখ টাকা বিমান ভাড়া নিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করতে সিন্ডিকেট হয়ে এগুলো করছে।
বিবৃতিতে শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, বিভিন্ন দেশের খরচ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এবার সব দেশে তুলনামূলকভাবে হজের খরচ বৃদ্ধি হলেও বাংলাদেশের হজ যাত্রীদের খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। ইন্দোনেশিয়া থেকে একজন মুসলমানকে হজে যেতে হলে ৩ লাখ ৪৭ হাজার ৩৪৭ টাকা খরচ করতে হবে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি। মালয়েশিয়ায় যেসব পরিবারের মাসিক আয় ৯৬ হাজার টাকার কম, সেসব পরিবারের সদস্যদের জন্য হজেরর খরচ ধরা হয়েছে দুই লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা। মাসিক আয় বেশি হলে দিতে হবে দুই লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা। দেশটিতে হজের জন্য সরকার বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে থাকে। পাকিস্তানে গত বছরের তুলনায় হজের খরচ ৩৬.৫৯ শতাংশ বাড়িয়ে ১১ লাখ ৭০ হাজার পাকিস্তানি রূপি যা বাংলাদেশি টাকায় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬১৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ভারতে ২০২১ সালে এই খরচ ছিল বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ ২৩ হাজার ৫৭১ টাকা। তবে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, হজ প্যাকেজের খরচ ৫০ হাজার টাকা কমানো হবে। অর্থাৎ সেদেশে হজ কমিটি অব ইন্ডিয়ার মাধ্যমে যারা হজে যাবেন, তাদের খরচ হবে ৪ লাখ টাকার কম। সিঙ্গাপুরে হজ্জের খরচ গত বছরের তুলনায় প্রায় দেড় হাজার ডলার বেড়েছে। সেখানে সবচেয়ে কম প্যাকেজের জন্য দিতে হবে ৬ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে বিমানের ভাড়া কমিয়ে ১ লাখ টাকা করা এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখে হজের প্যাকেজ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করতে হবে।
অন্যথায় দেশবাসী বিমান এমডি, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর পদত্যাগেে আন্দোলনে নামতে নামতে বাধ্য হবে।
এমএমএ/