‘সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে আপস ও ছাড় হবে আত্মঘাতী’
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেছেন, তেঁতুল হুজুরদের আবদার মেনে পাঠ্যসূচিতে তেঁতুলতত্ত্বের স্থান দেওয়া হলে তা সুদূরপ্রসারী ক্ষতি বয়ে আনবে। সাম্প্রদায়িক শক্তি, ধর্মান্ধ শক্তির সঙ্গে যেকোনো ধরনের আপস ও ছাড় হবে আত্মঘাতী।
১৯৭১ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ঐতিহাসিক ঘটনাবলির স্মরণে জাসদের উদ্যোগে বুধবার (১ মার্চ) বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে শহীদ কর্নেল তাহের মিলনায়তনে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
জাসদ সভাপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলাভবন-বটতলা চত্বরে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার পতাকা প্রদর্শন ও উত্তোলন করা হয়। ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ও সর্বাধিনায়ক, ২ মার্চ প্রদর্শিত উত্তোলিত স্বাধীনতার পতাকাকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, ‘আমার সোনার বাংলা’কে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত নির্ধারণ করে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়। আর ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ, মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান ও অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতি স্বাধীনতার আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়।
তিনি বলেন, ৯ মার্চ মাওলানা ভাসানী স্বাধীনতার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন দেন। ১৯ মার্চ জয়দেবপুর সেনানিবাসে বাঙালি অফিসার ও সৈনিকদের বিদ্রোহ, ২৩ মার্চ পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে গান স্যালুট দিয়ে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন, রাজপথে সামরিক কুচকাওয়াজসহ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে স্বাধীনতার পতাকা হস্তান্তর এবং বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঢাকায় সেনানিবাস ও আমেরিকার দূতাবাস ছাড়া সচিবালয়, হাইকোর্ট, কূটনৈতিক মিশনসহ সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ভবন এবং জেলা-মহকুমা-থানায় স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করা হয়।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পোড়ামাটি কৌশলে বাঙালি জাতির উপর ক্র্যাকডাউন ও নির্বিচার গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা এবং পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুসহ মার্চের ঐতিহাসিক ও বীরত্বপূর্ণ ঘটনাবলি বাঙালি জাতির ইতিহাসে উজ্জ্বলতম মাসে পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বাধীন জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল। জাতীয়তাবাদী সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শই হচ্ছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তি।
জাসদ সভাপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানপন্থী শক্তি কখনই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন বাংলাদেশ মেনে নেয়নি। পাকিস্তানপন্থীরা এখনো বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের ভিত্তিতে আঘাত করেই চলেছে। খুনি মোস্তাক, জিয়া, এরশাদের হাত ধরে পাকিস্তানপন্থীরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আত্মা-সংবিধানকে কাঁটাছেড়া, রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত করেছিল।
তিনি বলেন, বিএনপি ১০ দফা, ২৭ দফা আন্দোলনের নামে পাকিস্তানপন্থীদের পুনরুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চাইছে। বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে জনগণের কোনো স্বার্থ নেই। বিএনপি আন্দোলনের নামে সরকার উৎখাত করে রাষ্ট্র ও সংবিধান উলট-পালটের ভয়ংকর খেলায় মেতেছে।
ইনু বলেন, এখনো সংবিধান সম্পূর্ণ কলুষমুক্ত হয়নি। রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ সম্পন্ন হয়নি। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠনের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল শক্তিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের উপর দাঁড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আত্মাকে পুনরুদ্ধার এবং ক্ষতবিক্ষত রাষ্ট্রকে মেরামত করার সংগ্রাম চালাচ্ছে। বিএনপি আন্দোলন করে নির্বাচন বানচালের যতই চেষ্টা করুক না কেন, যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানপন্থা, তেঁতুলতত্ত্বকে আদর্শিকভাবে রাষ্ট্র-রাজনীতি-সমাজ থেকে উচ্ছেদ, দুর্নীতিবাজ-লুটেরাদের বিতাড়িত করতে হবে এবং বৈষম্যের অবসানে সমাজতন্ত্রের পথে বাংলাদেশকে পরিচালিত করার সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে।
জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার, সহ-সভাপতি ফজলুর রহমান বাবুল, সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উদ্দিন মোল্লা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফজাল হোসেন খান জকি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন, জাতীয় শ্রমিক জোট-বাংলাদেশ এর সভাপতি সাইফুজ্জামান বাদশা, ঢাকা মহানগর পশ্চিম জাসদের সভাপতি মো. নুরুন্নবী, জাতীয় নারী জোটের নেত্রী উম্মে হাসান ঝলমল, জাতীয় কৃষক জোটের সভাপতি নুরুল আমিন কাউছার, জাতীয় যুব জোটের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ সামছুল ইসলাম সুমন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (ন-মা) কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাশিদুল হক ননী প্রমুখ।
এনএইচবি/এসজি