'মেগা প্রকল্পগুলো বন্ধ করে মানুষকে বাঁচাতে হবে'
জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরাবস্থা আর সংকটের ব্যাপারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বর্তমানে চলমান বড় বড় মেগা প্রকল্প গুলো বন্ধ করার আহবান জানিয়ে বলেছেন টাকার সংস্থান করতে হবে আর দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে। তিনি আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা থেকে রংপুরে এসে নগরীর দর্শনা এলাকায় অবস্থিত জাপার প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের কবর জিয়ারত ও দোয়া মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় কালে এসব কথা বলেন।
জিএম কাদের বলেন, দেশের যে ভয়াবহ অবস্থা তাতে করে সরকারকে এখনই প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তা নাহলে মুল্যর্স্ফীতি যেভাবে হচ্ছে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে তাদের দুবেলা খাবার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে দেশ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের মতো বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে। সে কারনে দেশের মানুষকে বাঁচাতে সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
জিএম কাদের জাতীয় পার্টির ভাঙ্গন সাবেক মহাসচিব দল থেকে অব্যাহতি পাওয়া মশিয়ার রহমান রাঙ্গার অশালীন বক্তব্যের জবাবে বলেন, জাতীয় পার্টি বিভক্ত হয়নি বরং দলের নাম ব্যবহার করে কিছু মানুষ বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে তাদের কথার কোন গরুত্ব নেই আমরা ওই সব কথার কোন গুরুত্ব দেইনা এবং আমরা উদ্বিগ্ন নই।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এককভাবে আমাদের যে রাজনৈতিক শক্তি ও অবস্থান আছে, সেটিকে আমরা জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আমাদের একটা অতীত আছে। অতীতে যে রকম সুশাসন আমরা দিয়েছিলাম, পরবর্তীতে কোনো সরকার সেরকম দিতে পারেনি। আমরা এখন সমস্যা সমাধানের অঙ্গীকার নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হচ্ছি। আমরা এভাবে নিজেকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছি। নির্বাচনের আগে অবস্থা ও পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিব।
ইভিএমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আমরা আগে থেকেই বলে আসছি ইভিএমে কারচুপি হতে পারে। ইভিএমের মাধ্যমে সরকারি দল প্রভাব বিস্তার করে রেজাল্ট ছিনতাই করতে পারে। সাধারণ নির্বাচনে সরকারি দল এখন প্রতিনিধিত্ব করছে, সরকারি দলের অধীনে সব কিছু থাকায় তারা ক্ষমতা দেখিয়ে থাকে। ভোটের রেজাল্ট নিজের পক্ষে নিয়ে যেতে পারে। এসব কথা আমরা সব সময় বলে আসছি। এর আগেও আমরা যে কথাগুলো বলেছিলাম, সেগুলো সত্য প্রমাণিত হয়েছে। ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হয় না, এবার নতুন নির্বাচন কমিশনার নিজেই বলেছেন। গাইবান্ধা উপনির্বাচনে সেটা প্রমাণিত হয়েছে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দ্রব্যের দাম বেশি নিয়ে কথা বলছি। জনগণ যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সে মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার প্রস্তাবাব দিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে রেশন কার্ডের মাধ্যমে বা অন্য কোনোভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী সরকার দিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কিছু দিন আগেও বলেছেন খাদ্য সংকটের মাধ্যমে দেশে দুর্ভিক্ষ হতে পারে। এটা মোকাবিলায় সরকারকে এখন থেকে প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।
মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান ছাড়াও ন্যায্যমূল্যে জনগণকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পৌঁছে দেওয়াটার দাবি আমরা করছি। আমরা আগেই অর্থ সংকটসহ দুর্ভিক্ষ হবার মতো পরিস্থিতির আভাস পেয়েছি। অর্থনৈতিক প্রভাব যেভাবে সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে, তাতে ব্যয় বেড়েই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন, ব্যয় নির্বাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে দেশে বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।
জাতীয়পার্টি থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার হুমকি-ধমকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কে কি বলে বলুক, আমি কোনো গুরুত্ব দিচ্ছি না। যারা এসব কথা বলছেন, সেগুলা অবান্তর কথা। এসব বিষয়ে আমি মনে করি মতামত দেওয়া ঠিক না। যারা জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করছে, আমরা তাদের নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নই।
এর আগে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের নগরীর দর্শনা এলাকায় এরশাদের কবর জিয়ারত করেন এবং ফাতেহা পাঠ করেন। এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুল হক চন্নু, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আদেলুর রহমান আদেল, রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও রংপুর মহানগরের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, জেলার আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মাসুদ চৌধুরী নান্টু, সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক সহ কেন্দ্রীয় ও জেলা জাপার বিপুল সংখ্যব নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এএজেড