ফজলে রাব্বীর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী যারা
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সংসদীয় আসন গাইবান্ধ-৫ (সাঘাটা-ফুলছড়ি)-এ বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচনে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তার মৃত্যুতে আসনটি শূন্য হওয়ায় সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেই আসনটি ধরে রাখতে প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের কন্যা ফারজানা রাব্বী বুবলী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তিনি বাবার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করতে চান। এ ছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজন। এরই মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজন হলেন- ফারজানা রাব্বী বুবলী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপসম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ ও যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার। সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত গাইবান্ধা-৫ সংসদীয় আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে। দুই উপজেলায় কিছুটা রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকলেও যিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন তার পক্ষেই সবাই কাজ করবেন বলে মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচজন জানিয়েছেন। এই শূন্য আসনের উপনির্বাচনে মুখ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছে পাঁচজনের মধ্যে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি?
প্রয়াত ডেপুটি স্পিকারের ইমেজ ব্যবহারের পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন তার মেয়ে ফারজানা রাব্বী বুবলী। তিনি ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
তিনি জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে তার বাবার সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে কাজ করেছেন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাবার সম্মানে তাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন। তিনি তার বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে চান। তিনি বলেন, ফুলছড়িতে তার শ্বশুরবাড়ি, সাঘাটায় বাবার বাড়ি। তাই নির্বাচনে তিনি বাড়তি সুবিধা পাবেন।
ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপনও আশাবাদী দলীয় মনোনয়ন পাবেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মাহমুদ হাসান রিপন। মাহমুদ হাসান রিপন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি নির্বাচনে লড়বেন। আর নির্বাচিত হলে প্রথমেই উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বাড়াতে বালাসী-বাহাদুরাবাদ টার্নেল নির্মাণে উদ্যোগী হবেন। ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙন থেকে সাঘাটা-ফুলছড়ি রক্ষার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করবেন। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প নিয়ে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপসম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন, আমি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য শতভাগ আশাবাদী। কারণ ছাত্রজীবন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজ হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আমি প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম। একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রশ্নে সবসময় আপসহীন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল রাজনীতি থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছি। সাঘাটা-ফুলছড়ির স্থানীয় রাজনীতিতেও নেতা-কর্মীদের সময় দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা সফল প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন দিলে সাঘাটা-ফুলছড়ির সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলসভাবে কাজ করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিরলস প্রচেষ্টার সংগ্রামে একজন সারথী হয়ে ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ ভূমিকা পালনের চেষ্টা করব। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নত ও সমৃদ্ধ ডিজিটাল সাঘাটা-ফুলছড়িকে স্মার্ট সাঘাটা-ফুলছড়িতে রূপান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আল মামুন আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে আমি নির্বাচিত হলে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনকে স্থায়ীভাবে প্রতিরোধের ব্যবস্থাকরণ, আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নদীকেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র তৈরি, বালাসী-বাহাদুরাবাদ পর্যন্ত টানেল নির্মাণ, শিল্প-কলকারখানা, হাইটেক পার্ক, আইসিটি সেন্টার ও তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপন করে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করব। রাজধানীর সঙ্গ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ, দ্রুত গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থাকরণ, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও আধুনিক স্টেডিয়াম নির্মাণের চেষ্টা করবো। চর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে চরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণের পাশাপাশি চরাঞ্চলে মানসম্মত শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষকদের ভাগ্যোন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করে তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
তিনি বলেন, সদ্য প্রয়াত মাননীয় ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলে রাব্বী মিয়া এমপির অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করে সাঘাটা-ফুলছড়িকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ উপজেলাতে রূপান্তর করা হবে। দুই উপজেলার সর্বস্তরে ঘুষ, দুর্নীতি, মাদক, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ করে জবাবদিহির মাধ্যমে সর্বোচ্চ নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলা পরিচালিত হবে। সমগ্র দেশে এই দুটি উপজেলাকে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দলীয় মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। সাঘাটা-ফুলছড়ির সব শ্রেণি পেশার মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মরা আমাকে নিয়ে অনেক বেশি আশাবাদী। দীর্ঘদিন ধরে আমি এলাকার মানুষকে পাশে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি মনোনয়ন পেলে সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে বিপুল ভোটে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত করতে পারব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
অন্যদিকে, মনোনয়ন প্রত্যাশী ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ বিশ্বাস করেন দলীয় নেত্রী অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন এবং যোগ্য প্রার্থীকেই নৌকার মাঝি করবেন।
তিনি আরও বলেন, বিগতদিনে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বর্তমান সরকারের সকল উন্নয়ন প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছি। সরকারের এমন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও দলীয় নেত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বর্তমানে যেকোনো সময়ের চেয়ে ফুলছড়ি-সাঘাটা আওয়ামী লীগ জনপ্রিয় ও সুসংগঠিত।
অপরদিকে আরেকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবলীগ নেতা সুশীল চন্দ্র সরকার জানান, তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী ও জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার জীবনমান ও দুই উপজেলার উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে তার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
গাইবান্ধা-৫ আসনটি শূন্য হয়েছে গত ২৩ জুলাই। এদিন থেকে পরবর্তী নব্বই দিন বলতে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময়কে বোঝায়। এ হিসেবে আগামী ২০ অক্টোবরের মধ্যে উপনির্বাচনটি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধতা রয়েছে। গত ২৪ জুলাই সংসদ সচিবালয়ের সচিব কে এম আব্দুস সালাম আসন শূন্য ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করেন।
এসএম/এসএন