প্রতিটি গুলির হিসাব দিতে হবে, পুলিশকে গয়েশ্বর
ভোলায় নেতাকর্মীদের সমাবেশ ও মিছিলে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে আব্দুর রহিম প্রাণ হারান উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, প্রতিটি গুলির হিসাব আপনাদের দিতে হবে।
সোমবার (১ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ভোলায় পুলিশের গুলিতে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহতের ঘটনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। প্রতিবাদ সমাবেশটি আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে গয়েশ্বর বলেন, দেশটার মালিক পুলিশ কিংবা সরকার নয়। এই দেশের মালিক আব্দুর রহিমের মতো জনগণ। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদ্যুৎ খাতে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। টাকার হিসাব চাইলে গুলি করে মানুষ মারবেন?
ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘পুলিশ যে গুলি করছে, পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে কে? তাকে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এসপিকে বলতে চাই, আপনি পৈতৃক সূত্রে ভোলার মালিক হননি। চাকরি করতে গেছেন। সভা শেষে তারা মিছিল করতে চেয়েছেন। মিছিল করা কোনো অন্যায় নয়। এটা নাগরিক অধিকার। আপনি বাধা দেওয়ার কে? আর বাধা দিতে গিয়ে আপনি গুলি করার কে? প্রতিটি গুলির হিসাব আপনাদের দিতে হবে। আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, ঈশ্বর যেসব পুলিশ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের দীর্ঘায়ু কর। আমরা নিজের হাতে তাদের বিচার না করা পর্যন্ত ওরা যেন জীবিত থাকেন।
তিনি বলেন, সরকারের নির্দেশ যদি না থাকতো তাহলে ভোলার এসপি ইতোমধ্যে সাসপেন্ড হতেন। যারা গুলি করেছেন তারা বিভাগে ক্লোসড হতেন।
নেতাকর্মীদের পাল্টা আঘাতের আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘আমরা পুলিশকে নিয়ে এমনভাবে কথা বলি যেন মনে হয়, ওরা আমাদের দুলাভাই। প্রজাতন্ত্রে সব কর্মচারী আমাদের ট্যাক্সের টাকায় চলেন। কিন্তু তাদের টাকায় জনগণ চলে না। তারা যদি আমাদের সঙ্গে বে-আইনি করে তাহলে আমরা তাদের সঙ্গেও সেরকম করবো।
ভোলায় গুলিবিদ্ধ এবং গুরুতর আহত তাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভোলায় কর্মীদের সমাবেশ ও মিছিলের মধ্যে পুলিশের বেপরোয়া গুলিতে হারিয়ে গেল আমাদের এক সহযোদ্ধা আব্দুর রহিম। ঢাকার দুইটি মেডিক্যালে এখন যারা চিকিৎসাধীন আছেন তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বেঁচে থাকবে কিনা জানি না।
মোবাইলে ছবি তোলা, ভিডিও করা আর শেয়ার দেওয়ার মধ্যেই নেতাকর্মীরা তাদের দায়িত্ব সাড়ছেন। রহিমের মৃত্যুতে কেন তাৎক্ষণিক নেতাকর্মীরা সারাদেশে আন্দোলন না করে নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন— এসব নিয়েও ক্ষোভ ঝাড়েন বিএনপির এ নেতা।
তিনি বলেন, আজকে সকালে গায়েবী জানাজায় ছিলাম এবং দেখলাম। একটি জানাজার অনুষ্ঠানে চারিদিকে শুধু ক্যামেরা। মানে ছবি তোলাটাই মূল কাজ। তার জন্য দোয়া করাটা মূল কাজ না। হাতে হাতে, পকেটে পকেটে ক্যামেরা। ছবি তোলা, আর নেতাদের কাছে পাঠানো আর ফেসবুকে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। এটিই একমাত্র প্রমাণ করে আমাদের দায়িত্ব।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সিদ্ধান্ত দেন, নির্দেশ দেন, আমরা অনেক কিছু করব। এটা রাজনীতির ভাষা না। যখন ঘটনা ঘটে তাৎক্ষণিক জানিয়ে দিতে হয় সারাদেশে। এই কাজ করার জন্য উপরের দিকের সিদ্ধান্তের জন্য তাকিয়ে না থেকে সঙ্গে সঙ্গেই মাঠের কর্মসূচিতে যাওয়া দরকার। যা হবে নগদ।’
কারো নির্দেশের অপেক্ষায় বসে না থেকে যার যার জায়গা থেকে প্রতিবাদ-প্রতিহত করার ইঙ্গিত দিয়ে গয়েশ্বর আরও বলেন, আব্দুর রহিমের মতো মানুষ মারা যাবে, আর বক্তৃতা দেব, আর বসে বসে চিনা বাদাম খাব। এটা হয় না। আন্দোলন করতে গিয়ে কেউ একা নয়। সব সংগঠনকে মাঠে নামতে হবে। তাদের জবাব দিতে হবে। এরা রক্ত পিপাসু এদের সঙ্গে সুন্দর সুন্দর কথা, সুন্দর বাক্য বিনিময়ের দরকার নেই। যেখানে হাত ছাড়া কথাই চলে না সেখানে হাতই ব্যবহার করতে হয়। আপনারা সব বোঝেন তাই যখন যেখানে ঘটনা ঘটবে সারাদেশে যে যেখানে আছেন মুহূর্তের মধ্য বেরিয়ে পড়বেন। আজকে আমাদের না পেয়ে ঘরের মানুষদের ধরে নিয়ে যায়। সুতরাং এরা যদি নিয়মের বাইরে, আইনের বাইরে কাজ করতে পারে, এদের সঙ্গে আমার আইনের ভাষায় কথা বলার প্রয়োজনটা কি?
এমএইচ/আরএ/