সরকার জনগণের সামনে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরছে না: মির্জা ফখরুল
সরকার প্রকৃত তথ্য কখনো জনগণের সামনে তুলে ধরছেন না বলে অভিযোগ করেছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার ২৬ জুলাই খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সঠিক তথ্য না দেওয়ার পিছনে কারণ একটাই সেটা হচ্ছে জিডিপি ও সঞ্চয়ের হার অনেক নিচের দিকে চলে যাচ্ছে। যার ফলে বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে বিনিয়োগ আসছে না। উন্নয়নের ভিত্তি হচ্ছে বিনিয়োগ, বিনিয়োগ না হলে উৎপাদন হবে না, উৎপাদন না হলে সঞ্চয় হবে না আর সঞ্চয় না হলেও বিনিয়োগ হবে না। একটা একটি সাইকেল চক্র কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার এখানে প্রতারণা করছে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। উৎপাদন উন্নয়ন বিনিয়োগ সঞ্চয় সবমিলিয়ে তারা যেসব তথ্য দিচ্ছে সবগুলোই মিথ্যা তথ্য।’
সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চলমান সংলাপ পাশাপাশি সংসদে প্রধান বিরোধীদলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি কোন প্রকার যোগাযোগ হচ্ছে কিনা, সংলাপ করবে কিনা প্রশ্ন মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সংলাপের শুরুতেই আমরা বলেছিলাম প্রত্যেকটি রাজনীতির সকল গুলোর সঙ্গেই আমরা যোগাযোগ করব যোগাযোগ করছি সংলাপ করব সংলাপ করছি। ধারাবাহিকভাবে আমরা সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ সালের নির্বাচনের মত হবে না বলে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এটা স্পষ্ট ও প্রমাণিত বর্তমান সরকার যদি ক্ষমতা থাকে এবং দলীয় সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু অবাধ গ্রহণযোগ্য হবে না, হতে পারে না। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যেটি করেছে সেখানে তারা গণতন্ত্রের একটি মুখোশ পরে রাখে, একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত দেখায় দেখিয়ে ক্ষমতা ধরে রাখে। এর ফলে মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ভোট দিতে পারছে না। আমাদের সংবিধানে যতটুকু আছে তাতে দেশের মানুষ ভোট দেওয়ার অধিকার একমাত্র সেই সুযোগটায় তারা দেশের নাগরিক হিসেবে মনে করে আসছে। দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের নাগরিকরা তাদের সেই অধিকার থেকে আজ বঞ্চিত হয়েছে। এর কারণটাই হচ্ছে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনারের কোন সুযোগ নেই কোন ক্ষমতা নেই দলীয় সরকারের নির্দেশ উপেক্ষা করে এখানে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারার।’
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নীতি একটাই নিজেদের স্বার্থে সম্পদ লুট করা এবং সেই সম্পদ বিদেশে পাচার করা। একটি সরকারের যখন উদ্দেশ্যেই হয়ে দাঁড়ায় জনগণের সম্পদ লুট করা তখন দেশের অর্থনীতি সাসট্রেনেবল হয় না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের মুনাফার স্বার্থের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিয়মনীতি বিসর্জন দিয়ে চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন, কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্টের সুযোগ প্রদানের ভয়াবহ দুর্নীতির কারণে, ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ প্রচুর অর্থ ব্যয় করার ফলে বর্তমানে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। এই সব বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি আইন তৈরি করে নজীরাবিহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২-৩ বৎসরে বন্ধ হবার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান আছে। বেশ কিছু সংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ছাড়াই ৩ বৎসর সরকারকে ৫৪ হাজার কোটি টাকা গচ্ছা দিতে হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা। গত এক যুগে ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ গচ্ছা প্রায় ৮ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার। বিদ্যুতের চাহিদা সঠিক ভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতি পরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুঠ করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায় দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বৎসরে সুদ সহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন ‘সরকার লোডশেডিং শূন্য কোঠায় নিয়ে আসায় উৎসব করেছে আতশবাজি পুড়িয়ে অন্যদিকে এখন শহরে ২/৩ ঘণ্টা এবং গ্রামঞ্চলে ৫/৬ ঘণ্টা লোডশেডিং জন-জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। শিল্পে ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির ওপর চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে।’
সরকারকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ব্যর্থতা স্বীকার করে পদত্যাগের আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘বিবিএস প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে গত মাসে দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭৩৫৬ শতাংশে। যা নয় বৎসরে সর্বোচ্চ, আইএডপিআরআই এর হিসাব অনুযায়ী একেবারে নতুন করে ৫০ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে পতিত হচ্ছে। এটা দারিদ্র সীমার নিচে বাসকারী শতকরা ৪২ঁ ভাগের অতিরিক্ত।’
‘এই অনির্বাচিত সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক নীতি যা শুধুমাত্র লুঠপাটের অর্থনীতি তৈরি করছে, সরকার দলীয় এক দলীয় এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ যদি আওয়ামী ব্যবসায়ীদের অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধি করছে ও অন্যদিকে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তি এবং কৃষক, শ্রমিকেরা আরও দরিদ্র হচ্ছে। প্রকট আয়ের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। উদ্দেশ্য মূলক ভাবে এই বৈষম্যের সৃষ্টি করা হচ্ছে।’
সম্প্রতি ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশের সবাই অপরাধী মন্তব্যে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এর মহাপরিচালক নিরব থাকায় তীব্র সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সীমান্তে গুলি করে হত্যা মানবাধিকার লংঘন। কেউ অপরাধী হলেও তার বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই বিষয়ে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য দাবি করছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের এই ধরনের ন্যাক্কার জনক, অসামাজিক কার্যকলাপকে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে মদদ দেওয়া হয় বলে এই ঘটনা গুলো ঘটছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভয়ারন্যে পরিণত হয়েছে। অবিলম্বে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি করছি।