সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে: রিজভী
দেশে অবৈধ ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রকৃত আইনের হাতের চেয়েও অবৈধ ক্ষমতার হাত অনেক লম্বা। তাই ছাত্রলীগ, যুবলীগ এক সর্বনাশা- সময় সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এ ঘোর দুর্দিনে জনগণের জান-মাল এখন ভয়ানক বিপন্ন। তাদের অব্যাহত গুম, খুন, নারী শিশু নির্যাতনে সারাদেশে এক বিষাদের ছায়া নেমে এসেছে। সরকারের নির্দেশেই বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রুহুল কবির।
তিনি বলেন, সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠেছে। দেশে বেকারত্ব, দারিদ্র্য, অনাহার, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য থেকে দৃষ্টি সরাতেই এসব হত্যাকাণ্ড। এর উপর দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং চলছে, তথাকথিত উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। দেশ থেকে লাখ-লাখ কোটি টাকা পাচার করে অর্থনীতিকে চরম বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে।
‘দলীয়করণের মাধ্যমে প্রশাসনকে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগ এখন সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্তের বাস্তবায়নের যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। নানা কালা-কানুনের মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মানুষের বাকস্বাধীনতা, মানুষের ভোটের অধিকার নেই, মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার নেই, দেশের সব সেক্টরে এখন নৈরাজ্য চলছে।’
রুহুল কবির বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে প্রতিহিংসামূলক আওয়ামী বিচারের বন্দিশালায় বন্দি করে রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় একের পর এক সাজা দেওয়া হচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে। এতেই দেশের যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির উপলব্ধি করা যায়।
‘আওয়ামী মরণঘাতি ভাইরাস গোটা রাষ্ট্র ও সমাজকে কুরে কুরে খাচ্ছে। এখন যেদিকে তাকানো যায় নৈরাশ্য, নৈরাজ্য আর প্রহসনের ছবি। শ্রীলঙ্কার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি বর্তমানে বাংলাদেশেও বিদ্যমান। এ যখন দেশের অবস্থা তখন বাংলাদেশের জনগণ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে কি না সেই আতঙ্ক থেকে বিরোধী দল নিধনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবেই যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে কুড়িগ্রামের শফিকুল ইসলামকে’- যোগ করেন রিজভী।
বর্তমান আওয়ামী শাসন পুরোনো বাকশালেরই পুনর্মুদ্রন মন্তব্য করে সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, নব্যবাকশালী আওয়ামী শাসন যন্ত্রের কাছে এদেশের সংগ্রামী জনগণ কখনো মাথা নত করবে না। জনগণের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে যেকোনো সময়।
তিনি বলেন, ১/১১’র অসাংবিধানিক সরকারের সহায়তায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসার পর থেকে বিএনপিকে নির্মূলের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে অবৈধ সরকার। গত ১৪ বছরে প্রায় সারাদেশে হাজার-হাজার নেতা-কর্মী হত্যা ও নির্যাতনের শিকার। গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যার শিকার হয়েছেন বেশ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী। দেড় লক্ষাধিক মিথ্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীকে।
গুম ও বিচারবর্হিভূত হত্যা প্রত্যেকটির সঙ্গে ক্ষমতাসীনরা জড়িত অভিযোগ করে রিজভী বলেন, এদের আমলে নারী ও শিশুর উপর নির্যাতন চলছে নারকীয় কায়দায় ধারাবাহিকভাবে। প্রতিনিয়ত আওয়ামী নেতাদের দ্বারা শিক্ষকরা লাঞ্ছিত হচ্ছেন। এ সরকারের আমলে নারীর জীবন, সম্ভ্রম, লজ্জা, সম্মান উপেক্ষিত। মায়ের পেটের শিশুও তাদের হাতে নিরাপদ নয়।
‘এই সরকারের আমলে ৪৫ জন সাংবাদিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সাগর-রুনির হত্যার বিচার আজও হয়নি। স্বাধীন মতপ্রকাশের কারণেই বেছে বেছে সাংবাদিকদের হত্যা করা হয়েছে এবং বন্দি করা হচ্ছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গণতন্ত্রের কষ্টিপাথর মনে করা হয়। অথচ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে শত্রুবলে মনে করে সরকার। এ কারণেই আজ স্বাধীন বিবেকের উপর অবৈধ সরকারের ক্রমাগত সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত রয়েছে।’
যশোরে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধনী ও কুড়িগ্রামে যুবদল নেতা মো. শফিকুর রহমান হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের জোর দাবি জানান রিজভী।
এসএন