আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনেই ইভিএম চায়
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ চায়। আমরা এবিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
এর আগে, নির্বাচন কমিশনের আমন্ত্রণে দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠকে বসতে কমিশনে পৌঁছায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। এসময় নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা আওয়ামী লীগ প্রতিনিধি দলকে শুভেচ্ছা জানান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এবারই আইনের মাধ্যমে কমিশন হয়েছে। এখানে একটা পজিটিভ চেঞ্জ হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে চাই।
কতগুলো আসনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ চান এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা সব চাই। আমরা মন থেকে চাই, চেতনা থেকে চাই। ৩০০ আসনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট হলে আমাদের কোন আপত্তি নাই, আমরা সাপোর্ট দেবো।
অন্য রাজনৈতিকদলগুলো ইভিএম এর বিপক্ষে আওয়ামী লীগ কেন ইভিএম চায় এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আজ যারা এখানে এসেছে অধিকাংশই ইভিএম এর পক্ষেই বলেছে। কে বললো ইভিএম এর বিপক্ষে? আগে কারা কি চেয়েছে সেটা তাদের বিষয়। আজ অনেকগুলো দল আসছে, আমরা সবার কথা শুনেছি। অনেকে ইভিএম এর বিপক্ষেও বলেছে, এটাই গণতন্ত্র। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য্য। ভিন্ন মত থাকতেই পারে তাতে তো কোন অসুবিধা নেই।
বিএনপি তো ঘোষণা দিয়েছে এই সরকারের অধিনে নির্বাচনে আসবে না তাহলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কিভাবে হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, আমার বিশ্বাস বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। আমরাও চাই বিএনপি আসুক। আমরাই চাই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ইলেকশন হোক। সে কারণে আমরা বিএনপির মতো একটা বড় দল বাইরে থাকবে এটা আমরা চাই না। আমরা চাই তারা আসুক। তারা অনেক কথাই বলেন শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
বিএনপি আসবে এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ কিভাবে এতো আত্মবিশ্বাসী হলো জবাবে বলেন, নির্বাচন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এটা বিএনপির অধিকার। সরকারের সুযোগ দিতে হবে কেন? এটা একটা সুযোগ নয় যে সরকারের সুযোগ দিতে হবে। এটা বিএনপির অধিকার। দল হিসেবে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে নির্বাচন করতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা বলেই যাচ্ছি। আমরা পদ্মা সেতুতে দাওয়াত দিয়েছি এটা একটা পজিটিভ অ্যাটিটিউড আছে। সেই কারণে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তারা আসবে। তবে তারা নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ব নেবে। তারা নিজেরাই নির্বাচনে অংশগ্রহণে সিদ্ধান্ত নেবে, হয়তো শেষ বেলায়। ঘোলা করে খাবে আর কি?
ভোট কারচুপি ইভিএম এ সম্ভব না এটা ইসি জানিয়েছে তারা এও বলেছে যে সমস্যা রাজনৈতিক দলগুলোর। দায়িত্ব তাদের। এবিষয়ে আপনাদের অভিমত কি? ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। মির্জা ফখরুল প্রায়ই বলে সরকারের অধিনে ইলেকশন। ইলেকশন তো এই সরকারের অধিনে হবে না। ইলেকশন হবে ইলেকশ কমিশনের অধিনে। সরকার কর্তৃত্বপূর্ণ স্বাধীন ভূমিকা পালন করে গ্রহণযোগ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করতে যে যে সহযোগিতা দরকার সর্বাত্নক সহযোগিতার আশ্বাস আগেও দিয়েছি, আজও আশ্বাস দিয়েছি।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সংলাপ করবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, রাষ্ট্রপতি কি করবেন সেটা তার এখতিয়ার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে করে থাকেন। নির্বাচন কমিশন সংলাপে ডাকবে আমরা আসবো। এ ব্যাপারে আমাদের স্ট্যান্ড ক্লিয়ার এন্ড লাউডলি। ইভিএম এর ব্যাপারে আমরা অত্যান্ত পরিস্কার। এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার। তবে পৃথিবীর অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে যেভাবে নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হয় বাংলাদেশেও শেখ হাসিনা সরকার সেটাই করবেন।
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া এবং উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান।
১৩ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করতে আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) সম্পর্কিত এই সভা বিকেল ৩টায় ইসি সম্মেলন কক্ষে শুরু হয়।
দুই ধাপে ২৬টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল ইসি। গত ১৯ ও ২১ জুন ২৬টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ইভিএম যাচাই বিষয়ক সভা করেছে সংস্থাটি। তবে এতে বিএনপিসহ আটটি দল সাড়া দেয়নি।
এসএম/এএজেড/এএস