রাষ্ট্রপতি, স্পিকার ও আমি কালো টাকার মালিক: চুন্নু
একটা প্লট থাকার জন্য যদি কালো টাকার মালিক হয় তাহলে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী মাননীয় স্পিকার আপনি, রাষ্ট্রপতি এবং আমি কালো টাকার মালিক। এভাবেই সংসদে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের কড়া জবাব দিলেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।
বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিকালে সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটের উপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট করা নিয়ে নতুন করে ভাবনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ঢাকায় যার ফ্ল্যাট-প্লট আছে সে কালো টাকার মালিক। আমি ৫ বার এমপি, ৩ বার মন্ত্রী। আমার ঢাকায় কোনো বাড়ি নাই। ২০১১ সালে আমি পূর্বাচলে প্লট পেয়েছিলাম। তার মানে অর্থমন্ত্রীর নতুন সংজ্ঞা অনুযায়ী আমি কালো টাকার মালিক হয়ে গেছি। মাননীয় স্পিকার আমরা যারা ঢাকায় আছি আপনি, রাষ্ট্রপতি, আমি সবাই কালো টাকার মালিক। তবে আমি আইন লঙ্ঘন করে কালো টাকার মালিক হয়েছি কি না সংসদে এর ব্যাখা চাই।
তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে, কথার ফুলছড়ি দিয়ে এই বাজেট প্রণয়ন করেছেন, যার পাঠ উদ্ধার করা কঠিন। সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা ছিল চলতি বাজেটে, এবারের বাজেটে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি করা হয়েছে। ১ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকা যখন ছিল তখন ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এবার নিচে নেমে গেছে। এবার জিডিপির ২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি কীভাবে নিয়ন্ত্রণ হবে সেটা বাজেটে উল্লেখ করেন নাই।
পাচারকৃত অর্থ ফেরাতে অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনার কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিলে পাচারকৃত অর্থ বৈধ হয়ে যাবে। ৪০ বছর যাবত সব সরকার (আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি) কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়েছে। কিন্তু কালো টাকা সাদা হয়েছে কম। আমি যখন ব্যবসা করি ২৫ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। তাহলে বিদেশে টাকা পাঠিয়ে ৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে হালাল করব। এটা মানি লন্ডারিং আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আইন সংশোধন করা না হলে এটা বাস্তবায়নের কোনো সুযোগ নেই। কীভাবে বিদেশ থেকে পাচার করা টাকা আনবেন। আইন সংশোধন না হলে এই আইন বাস্তবায়ন হবে না। এই সুযোগ দেওয়া সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বেআইনী অনৈতিক। অর্থমন্ত্রী বলেছেন টাকা বিদেশে যায় সুখের জন্য তাহলে যারা বিদেশে টাকা সুখের জন্য নিয়েছে এরা কি দেশে ফিরে আনবেন? এই টাকা কি ফিরে আনতে পারবেন? আনলেও কিছু আনবেন। এতে দেখা যাবে ভবিষতে এই সুযোগ নিয়ে অনেকে টাকা পাচার করছে। সিগারেটের উপর আমরা ট্যাক্স বাড়াতে বলি। জনগণ চায় ১০০ ভাগ ট্যাক্স বাড়ানো হোক সিগারেটে। ট্যাক্স বাড়ান না। তামাকের উপর ট্যাক্স বাড়ান, সিগারেটের উপর ট্যাক্স বাড়ান, এটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের এক এমপি বিএনপির কথা বলতে গিয়ে এরশাদ সাহেবকে স্বৈরাচার বলেছেন। যার জন্য করলাম চুরি সেই যদি বলে চোর তাহলে কোথায় যাই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে এত খাতির করলাম তিন-চারবার জোট করলাম। নির্বাচন করলাম ক্ষমতায় আনলাম, আসলাম। আর সেই আওয়ামী লীগের ভাইয়ের যদি জিয়াউর রহমানের গালি দিতে গিয়ে এরশাদকে গালি দেন তাহলে আর যাই কোথায়? তাহলে তো নতুন করে ভাবতে হবে। কি করবো কোথায় যাব।
এসময় আওয়ামী লীগের এক সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, কী ভালো লাগে না? লাগবে। সময় আসতেছে, চিন্তা কইরেন না।
চুন্নু আরও বলেন, তিন-চারবার এমপি থাকলে এরপর আর কোনো ভাতা পায়না। প্রধানমন্ত্রী তারও পরে আর কোনো ভাতা নাই। রাষ্ট্রপতিরও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি অবসরে গেলে সরকারি কোনো বাড়ি পায় না। ভারতে রাষ্ট্রপতি অবসরের পর বাড়ি দেওয়া হয়, পাকিস্তানেও দেওয়া হয়। আমাদের দেশের রাষ্ট্রপতিদের এর কোনো সুযোগ নেই। অবসরে গেলে যানবাহনের সুবিধা দেওয়া হয়না। ভারতে দেওয়া হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ভ্রমণের কোনো সুযোগ পান না। অথচ ভারতের রাষ্ট্রপতি পান। যিনি প্রধানমন্ত্রী, দুই-তিনবার প্রধানমন্ত্রী তার যদি কোনো বাড়ি না থাকে, রাষ্ট্রপতির যদি কোনো বাড়ি না থাকে তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন? আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলছি বিষয়গুলো ভাবার দরকার।
এসএম/এসজি/