'বিরোধীদলের নেতাদের সাজা দিতে সেল গঠন করেছে সরকার'
নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতাদের দ্রুত সাজা দিতে সরকার সেল গঠন করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার (৮ এপ্রিল) গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনি দেখুন যে, সেই ২০১৩ সালের একটি মামলা মুগদা থানার। এটা মিথ্যা গায়েবী মামলা। এখন একজন মানুষকে একই ঘটনায় দুইটা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। মুগাদা থানার বিস্ফোরক মামলায় ৩৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এখানে ৩২ জন খালাস পেয়েছেন আর ৭ জনকে দুই বছর তিন মাস/দুই বছর এক মাস.. এভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে।'
এটা এখন সারা দেশেই কিন্তু চলছে। আমরা শুনেছি যে, তালিকা তৈরি করেছে সরকার। সেই তালিকা ধরে বিভিন্ন জেলায় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা আছে এই মামলাগুলো দ্রুত শেষ করার জন্য একটা সেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, এই সেল তৈরি করে দিয়ে দ্রুত মামলাগুলো শেষ করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।'
বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এর প্রমাণ হচ্ছে এই মুগদা থানার মামলাটা। যেখানে কোনো কিছু নাই। আমার বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, সেই মামলাগুলোতে কী আছে? একটা হচ্ছে আমি ময়লার গাড়ি পোঁড়াচ্ছি, তারপর আপনার সিটি করপোরেশনের গাড়ি। আমার বিরুদ্ধে আছে সেক্রেটারিয়েটের ভেতরে মোটরসাইকেলের পেছনে গিয়ে বোমা মেরেছি …।
এই ছল-চাতুরি প্রতারণা করে গোটা জাতিকে একটা ভয়াবহ অন্ধকারের গহ্বরের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এটার বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে। রাজনৈতিককর্মীরা তো কেউ চোর না, এরা কেউ ডাকাত না, এরা কেউ ক্রাইম করে না। এরা সবাই রাজনৈতিককর্মী, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছে, গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছে তাদের সমস্ত মিথ্যা মামলা দিয়ে এভাবে একেবারে নির্মূল করার যে ভয়াবহ প্রচেষ্টা এটা ফ্যাসিবাদ ছাড়া কোথাও হতে পারে না।'
ফখরুল বলেন, ‘সরকারবিরোধী দলকে পুরোপুরি নির্মূল করতে কাজ করছে। যেটাকে আমরা বলি পাঞ্চ করা, নজিং অব দ্য অপজিশন। ঠিক আজকে ধরেন, ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পরে যেভাবে নির্মূল করে দিচ্ছে সেই একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদীদের নির্মূল করেছে জার্মানির হিটলার। পাকিস্তান আমলে আমাদের এই বাংলাদেশে একটা জাতিকে নির্মূল করার জন্য যেমন নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা সব কিছু চালানো হয়েছিল, পোঁড়ামাটির একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছিল, আজকে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে বিরোধীদলকে নির্মূল করার জন্য সেই একই অভিযান চালানো হচ্ছে।'
'আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা গলায় ফেনাতুলে ফেলছেন যে, সুষ্ঠু নির্বাচন, অত্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন তৈরি করা হয়েছে।'
তিনি বলেন, ‘যখনই বিরোধীদল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে এসেছে তাদের একইভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, মামলা দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে দেখেছেন যে, বাম জোট কর্মসূচি দিয়েছিল, সেখানেও একইভাবে তারা মামলা দিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে, মারপিট করেছে। ঢাকার লোকেরা ইশরাককে জনতার মেয়র বলে মনে করে। গত ৬ তারিখ তিনি দ্রব্যমূল্যের প্রতিবাদে মতিঝিলে লিফলেট বিতরণ করছিলেন। সেই সময়ে তাকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়, সেখানে অনেককে মারধর করা হয়, লাঠিচার্জ করা হয়। পরবর্তীকালে তাকে যখন আদালতে নিয়ে আসা হয় সেখানেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, টিয়ারগ্যাস সেল নিক্ষেপ করা হয়, নির্যাতন করা হয়।'
‘নতুন ইসি নাটক করেই যাচ্ছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন নাটক করেই যাচ্ছে। সিভিল সোসাইটিকে ডাকছে, সাংবাদিকদের ডাকছে। তাদের ডেকে খুব সুন্দর কথা বলছেন। নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুন্দর বাংলা বলেন। কথা বলার ভঙ্গীও সুন্দর। আগের ভদ্রলোক তো ছিলেন, যে কথাই ভিন্নভাবে বলতেন। এখনকার জন চমৎকার কথা বলেন এবং মানুষকে বিমোহিত করার চেষ্টাও তিনি করেন।'
‘গণমাধ্যম কর্মী আইন প্রসঙ্গে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরাও কম ভুক্তভোগী নন। ইতিমধ্যে আপনাদের অনেকেই নিহত হয়েছেন, মারা গেছেন। অনেককে জেলে যেতে হয়েছে সত্য কথা লেখার জন্যে। এখানে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন করা হয়েছে। এখন গণমাধ্যমকর্মী আইন করতে যাচ্ছে। আমাদের তথ্যমন্ত্রী সাহেব বলছেন, এটা রিভিউ করা হবে।'
‘রিভিউ করে কী করবেন সেটা তো আমরা ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে দেখেছি। যার ফলে এটা কোনো মতেই গণতন্ত্রের নিরাপদ দেশ নয়, এটা মানুষের বিকাশের জন্য নিরাপদ দেশ নয়, এই দেশ এখন সম্পূর্ণভাবে একনায়কতন্ত্র, কর্তৃত্ববাদী, এককথায় বলতে গেলে একটা ফ্যাসিবাদী সরকারের হাতে পড়েছে। এই সরকারকে সরাতে না পারলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব থাকবে না।'
সংবাদ সম্মেলনে মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, যুগ্ম আহবায়ক নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, মোশাররফ হোসেন খোকন, আবদুস সাত্তার, এসকে সেকান্দার, হারুনুর রশীদ, মুনির হোসেন চেয়ারম্যানম, আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান ফয়েজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
টিটি/