ভোটকেন্দ্রে সহিংসতা মামলার প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

ছবি : সংগৃহীত
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে হামলায় বিজিবি সদস্য নিহতের ঘটনায় সহিংসতার মূলহোতা ও মামলার প্রধান আসামি মো. মারুফ হোসেন ওরফে অন্তিককে ঢাকার আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বুধবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে কারওয়ান বাজারে র্যাবের গণমাধ্যম শাখায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, র্যাব সদরদপ্তর গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৪ এর অভিযানে মঙ্গলবার (১৪ ডিসেম্বর) রাতে ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিজিবি সদস্য নায়েক রুবেল হোসেনের হত্যাকাণ্ডের এজাহারনামীয় প্রধান আসামি মো. মারুফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মারুফ ভোট কেন্দ্রে হামলা এবং বিজিবি সদস্য হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. মারুফ হোসেনের পিতা মৃত মোসাদ্দেক হোসেন নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ১৯ বছর ধরে চেয়ারম্যান ছিলেন। তার পিতা গত ২০১৭ সালে মৃত্যুবরণ করলে; তিনি উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত হন। তার নির্বাচনী মূল্যায়ন অনুযায়ী নির্বাচনে জয়লাভ করতে তার স্থায়ী নিবাস এলাকার গড়াগ্রাম ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্র নং-৫৯, পশ্চিম দলিরাম মাঝাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রায় সব ভোট প্রয়োজন। যেকোনো মূল্যে তিনি এই কেন্দ্রের প্রায় সকল ভোট তার অনুকূলে আনার জন্য প্রয়োজনে পেশিশক্তি ব্যবহার করবে বলে পরিকল্পনা করেন। গ্রেপ্তারকৃত মারুফ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব থেকেই কেন্দ্র দখল এবং প্রয়োজনে হামলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র্যাবের মুখপাত্র জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভোট চলাকালীন আনুমানিক বেলা সোয়া ৩টার সময় তার পক্ষের ২০ থেকে ৩০ জন সমর্থক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ভোট কেন্দ্রে অনাধিকার প্রবেশ করে জোরপূর্বক জাল ভোট দেওয়ার চেষ্টা করে। ভোট কেন্দ্রের কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিতে চেষ্টা করলে তারা তাকে গালি-গালাজসহ শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। পরবর্তীকালে প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে মোবাইলে উক্ত ঘটনা অবহিত করলে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে ভোট গ্রহণ সাময়িক স্থগিত করা হয়। অতিরিক্ত পুলিশ টহল দল ঘটনাস্থলে এসে আইন-শৃঙ্খলার পরিবেশ স্বাভাবিক করে। অতঃপর বিকাল সাড়ে ৪টায় ভোট গ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে ভোট গণনা শুরু করা হয়। ওই কেন্দ্রে মোট ২ হাজার ৯৭১ ভোটের মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত প্রার্থীর পক্ষে ২ হাজার ৩৩৬ ভোট এবং অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী যথাক্রমে; ৭০টি ও ৬টি ভোট প্রাপ্ত হয়। ইতিমধ্যে অন্য ৮টি কেন্দ্রের ফলাফল বিশ্লেষণে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর ভোটের তুলনায় সামান্য পিছিয়ে থাকায় তিনি ফলাফল পরিবর্তনের জন্য (সম্পূর্ণ ভোট তার পক্ষে প্রদানের জন্য) প্রিজাইডিং অফিসারকে আটকে রেখে চাপ দিতে থাকেন। প্রিজাইডিং অফিসার অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি ও তার প্রায় শতাধিক সমর্থক বিভিন্ন ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসার, অন্যান্য নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, কেন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর হামলা করে আহত করে। এ সময় নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত সরকারি যানবাহন ও নির্বাচন কেন্দ্রে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। আনুমানিক রাত সাড়ে ৮টায় বিজিবি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মো. মারুফ হোসেন ও তার সমর্থকরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হয়।
সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর জখমের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে নায়েক রুবেল ঘটনাস্থলেই মারা যান এবং আরও অনেকেই গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। সহিংসতার এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর মামলার প্রধান আসামি মো. মারুফ হোসেন নীলফামারী জেলার জলঢাকায় ও পরবর্তীকালে গত ৩০ নভেম্বর থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঢাকার আশুলিয়ায় আত্মগোপন করে ছিলেন।
এনএইচ/টিটি
