স্বেচ্ছাসেবক দলে গঠিত হতে পারে আহ্বায়ক কমিটি (শেষ পর্ব)
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নয়, নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তে বিএনপির হাইকমান্ড। ৫ বছরের অধিক সময়ে এসে কমিটিকে বর্ধিত করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। এমনটা ধরে নিয়েই নতুন নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলকে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে সংগঠনটির ভেতর-বাইরে থাকা সাবেক ছাত্র-নেতাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে। বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এক নেতা ঢাকাপ্রকাশ কে এতথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে উপদেষ্টাসহ ১৮৬ জন। তারপরও কমিটি বর্ধিত করা অর্থহীন। সামনে কঠিন পথ অতিক্রম করতে হবে, আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথ উপযোগী নেতৃত্ব খুঁজে বের করতে হবে। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন কমিটির পক্ষেই তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। জেনে শুনে তৃণমূলের ভাষাকে পাশ কেটে নিজ স্বার্থে সংগঠনটির সুপার সিক্স বিএনপির হাইকমান্ডকে ভুল বুঝিয়ে ফায়দা নিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাই স্বল্প সময়ের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। সেই কমিটিতে কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা মহানগর (উত্তর-দক্ষিণ) কমিটি এবং বাইরে থেকে সাবেক ছাত্র নেতাদের সমন্বয় করে দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে ভাবছে হাইকমান্ড। যেহেতু সংগঠনটির বর্তমান কমিটিতে কোনো সদস্য পদ নাই, প্রত্যেকে বিভিন্ন বিষয়ক সম্পাদক, অন্তর্ভুক্ত কমিটির সবাই নেতা। তাই উপদেষ্টাসহ ১৮৬ জন বিশিষ্ট ঘোষিত কমিটিতে আরো সংযুক্ত করে কালক্ষেপণ করা অনর্থক ও দলকে স্থবিরতার দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়।
২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দলের ০৭ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। ০৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি কে ২০২০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ১৪৯ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি উপদেষ্ঠাসহ ১৮৬ জন।
সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাপ্রকাশকে বলেন- ‘কিছুদিন হলো আমরা বর্তমান কমিটিকে বর্ধিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটির জন্য একটি তালিকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিকট পাঠিয়েছি। উনি এখন বর্ধিত করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করবেন, নাকি নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন সেটা অপেক্ষা করা ছাড়া বলা যাচ্ছে না। কমিটি গঠনে একমাত্র এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপর অর্পিত।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ নাকি স্বল্প সময়ের জন্য হলেও আহ্বায়ক কমিটি হবে, একমাত্র এখতিয়ার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। নেতৃত্ব দিতে কে না চায়? নেতৃত্ব দিতে আমিও চাই- নতুন কমিটিতে দলের প্রতি অবদানের জন্য সভাপতির পদে মূল্যায়ন চাই।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের এক দায়িত্বশীল নেতা ঢাকাপ্রকাশ কে বলেন, নিষ্ক্রিয় কমিটিতে থাকার চেয়ে সাবেক নেতা হিসেবে থাকাটা সম্মানের। কেন্দ্রীয় কমিটির সুপার-সিক্স সকল নেতা অর্থ লেনদেনের বিনিময়ে দলকে সংগঠিত করার সময় নিয়ে দুর্বল করে দিচ্ছে। বিভাগীয় সাংগঠনিক টিম কমিটির নেতাদের বিরুদ্ধে অর্থ কেলেঙ্কারি, এমনকি নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠেছে। সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, কারণ অর্থ-বাণিজ্যের মূল হোতা হচ্ছে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্ব।
তিনি বলেন, কথা বলতে গেলে অনেক দূরে যেতে হয়.. কিন্তু যেহেতু সংগঠনের যে কোনো সিদ্ধান্তের জন্য যেহেতু আমাদের কে লন্ডনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় সেক্ষেত্রে কমিটি থাকা না থাকা একই কথা। কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রামে সাংগঠনিকভাবে সংগঠনকে দেখতে হলে নতুন কমিটি প্রয়োজন। কারণ সংগঠনের সভাপতি শফিউল বারী বাবুর মৃত্যুর পর থেকে দলে ‘চেইন অব কমান্ড’ নেই। সমন্বয়হীনতা ও দায় সাড়া অবস্থায় চলছে সংগঠন। নেতৃত্বে গতিশীল পরিবর্তন না হলে সংগঠন স্থবির হতে বাধ্য। নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখছেন না দলটির নেতৃত্ব।
শীর্ষ দুই পদে আলোচনায় যারা-
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটিতে শীর্ষ দুই পদে যেতে ইতিমধ্যে দৌড়ঁঝাপ শুরু করেছে সংগঠনটির নেতারা। সভাপতি পদ চাইছেন- ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো: গোলাম সারোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, সাধারণ সম্পাদক চাইছেন- সংগঠনটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাদরেজ্জামান, সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াসিন আলী, সহ-দফতর সম্পাদক নাজমুল হাসান, মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক গাজী রেজওয়ানুল হোসেন রিয়াজ, ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার প্রমুখ।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ ঢাকাপ্রকাশ কে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি, ছাত্রদল থেকে এখন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে আছি। যদি নতুন কমিটি গঠন করা হয় সেক্ষেত্রে যদি সঠিক মূল্যায়ন হয়- আমি সভাপতি হতে চাই, সভাপতির পদ প্রত্যাশী।
জেডএকে/কেএফ/