যারা উন্নয়ন দেখে না তাদের চোখ পরীক্ষা করা দরকার: প্রধানমন্ত্রী
যারা সরকারের উন্নয়ন দেখে না তাদের চোখের পরীক্ষা করানোর আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ‘তাদের (বিএনপিসহ কিছু মানুষের) চোখে কোনো উন্নয়নই নাকি দেশে হয় নাই! এখন বলতে হয় যে, আমরা তো একটা আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় নাই, চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়ত দেখতে পাবে যে উন্নয়ন হয়েছে কি না।’
মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রবিবার (২৭ মার্চ) বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা সভায় অংশ নেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নাম উল্লেখ না করে তার জেলার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর কোথাও কোনো মঙ্গা হয়নি। উত্তরবঙ্গে যে মঙ্গা ছিল সেটা উত্তরবঙ্গে যাদের বাড়ি তারা কি সেটা বোঝেন না? দেখেন না চোখে? চোখে বোধ হয় দেখেন না। তাই তাদের কথা দেশে নাকি উন্নতিই হয়নি। তো উন্নতি না হলে কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা আসতে কত সময় লাগতো? সেই ধরলা নদী যমুনা পার হয়ে কতভাবে আসতে হতো। এখন মাত্র ৬ ঘণ্টায় আসতে পারে। কারণ আমরা সেভাবেই পরিকল্পনা করেছি। ধরলা ব্রিজ, গাবখান ব্রিজ যখন করি, আমি উদ্বোধন করে যেতে পারিনি। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে এক মাসের মধ্যে উদ্বোধন করে বলেছিল আগের সরকার একটা ব্রিজও করে নি। তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম এক মাসের মধ্যে গাবখানের মতো ব্রিজ করে দিলেন! করলেন কিভাবে? এটা কি সম্ভব? মিথ্যা কথা বলায় তারা এক্সপার্ট তাদের সঙ্গে আমরা পারব না।
তিনি বলেন, তারা ভাঙা রেকর্ডের মতো বলেই যাচ্ছে। অবশ্য ভাঙা রেকর্ড এখন আর কেউ চেনে না। এখন তো সব ডিজিটাল, পেনড্রাইভের যুগ। আগের মতো তো আর রেকর্ড নেই, তারা কিন্তু বলেই যাচ্ছে একটার পর একটা। ইতিহাস বিকৃতির কথা বলে। ইতিহাস বিকৃতি করেছে কে? এই কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম পাঠ করেন আমাদের আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান। পরে একজন সেনা অফিসার দিয়ে পাঠ করাতে বলে কারণ সেনা অফিসার পাঠ করলে যুদ্ধ যুদ্ধ লাগে। সেখানে তার অবদান ঠিকই ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত।
বিএনপির জন্ম অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে দলের জন্মই হয়েছে জনগণের মধ্যে থেকে নয়, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসকের পকেট থেকে, বঙ্গবন্ধু-জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যে (জিয়াউর রহমান) জড়িত, ক্ষমতাকে স্থায়ী করতে যে হাজার হাজার সেনা সদস্যকে হত্যা করেছে- সেই অবৈধভাবে জন্ম নেওয়া দলটির (বিএনপি) কাছ থেকে গণতন্ত্রের ছবক শুনতে হয়।
সমালোচকদের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদ্যুত আমরা পৌঁছে দিতে পেরেছি। তারা নিজেরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল ভোগ করছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো বিদ্যুৎ ছাড়া চলতে পারে না। আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ তারা ব্যবহার করছে, এটা উন্নতি না?
আজকে পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, কর্ণফুলী ট্যানেল, রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো কী তাদের চোখে পড়ে না? এগুলো কী উন্নয়নের লক্ষণ না? আজকে দারিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে, এই উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না? খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি এটা তাদের চোখে উন্নয়ন না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আজিজুস সামাদ আজাদ ডন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও উত্তরের সভাপতি শেখ ফজলুর রহমান। গণভবন থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন দলের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
এসএম/আরএ/