সিইসি শেখ হাসিনার জন্য কাজ করছেন: রিজভী
শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, নিরপেক্ষ নির্বাচন ও চাকরী জাতীয়করণের দাবিতে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রিজভী বলেন, মানুষকে ভয় দেখিয়ে মানুষকে নিরুদ্দেশ করে দিয়ে আপনি আবারও একটি নিশি রাতের ভোট ডাকাতির আয়োজন করছেন। এইজন্য আপনার আদরের লোকদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। সেই নির্বাচন কমিশন প্রথম প্রথম বলছে সব রাজনৈতিক দল নির্বাচন করবে আবার এখন বলছে সংবিধানের বাইরে যেতে পারব না। বাংলাদেশের সংবিধান তো শেখ হাসিনার দর্জির মত কেটে নেওয়া সংবিধান। বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন একটি জাতির সংবিধান একটি জাতির আত্মজীবনী। বাংলাদেশের সংবিধান তো শেখ হাসিনার আত্মজীবনী। অতএব এই সংবিধান দিয়ে সুষ্ঠু সুন্দর নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আর সেই সংবিধানের কথা যখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন তখন বুঝতে হবে শেখ হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজ করছেন।
তিনি বলেন, আজকে যদি দেশের জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে দেশে অনেক কিছুই ঘটত না, আর জবাবদিহিতা না থাকায় এদেশের মন্ত্রীরা কাণ্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য রাখে। ভোটের ব্যবস্থাকে তারা কবরস্থ করেছে।
রিজভী বলেন, অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন ফরাসি বিপ্লব চলছিল তখন সেখানকার যে রাজার রানি সে ছিল হাসান মাহমুদ এর মত একটা বেকুব মহিলা। নিজে বৃত্ত বিলাসের মধ্যে থাকে কিন্তু মানুষের পেটে যে দাও দাও করে ক্ষুধার আগুন জ্বলছে রানীর কি কোনো ভ্রুক্ষেপ আছে। রানি তো আরাম আয়েশে ঝাড়বাতির নিচে থাকেন। আর পোলাও-কোর্মা রোস্ট সবসময় হাসতে থাকে। অষ্টাদশ শতাব্দীতে যখন মিছিল হচ্ছিল তখন রানী তার কর্মচারী কে জিজ্ঞেস করেন যে কিসের শব্দ । কর্মচারী বলেন ওরা রুটি খেতে পারছেনা তাই মিছিল করছে । রানি প্রতি উত্তরে বলেন তাহলে রুটি না খেতে পারলে কেক খেতে বল। হাছান মাহমুদ এরকমই আচরণ করছে। দেশের কি পরিস্থিতি চালের দাম কত এটা হাসান মাহমুদরা জানে না। তাদের তো দরকার পড়ে না, তাদের তো প্রচুর টাকা। তাদের ঘরে চাল দিয়ে যায়, মাছ মাংস দিয়ে যায় তারা কি জানে মধ্যবিত্ত শিক্ষকরা যারা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের ওই সামান্য বেতন দিয়ে ৫৫ থেকে ৬০০ টাকা দরে গরুর মাংস কেনা কি সম্ভব? এইভাবেই চিনি ডাল মুরগী গুড়া দুধের দাম মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমি নিশ্চিত করেছি বাড়িতে বাড়িতে আলো পৌঁছে দেওয়ার। প্রধানমন্ত্রী আপনি জানেন না চাল কিনতে না পেরে ডাল কিনতে না পেরে আলু কিনতে না পেরে ওই ক্ষুধার্ত মা যখন সন্তান বিক্রি করে তখন সে তার চোখে আলো দেখে না গভীর অন্ধকার দেখে। আপনি সেই অন্ধকার দেখেননি তাই আপনি গোটা জাতিকে নিয়ে মশকরা করছেন। আর বলছেন ঘরে ঘরে আপনি আলো জালানোর ব্যবস্থা করেছেন, বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। আপনি দেখেননি যখন কিছু কম দামে কেনার জন্য উপচে পড়া মানুষ টিসিবির ট্রাকের সামনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে এবং যখন ট্রাকের পণ্য শেষ হয়ে যায়, তখন কিনতে না পেরে খালি হাতে চলে যায়। আপনি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন নিম্নবিত্তদের হাহাকার শুনেননি। আপনি পায়রা বন্দরে যে আলোর কথা বলেছেন ওই আলো শিক্ষকের চোখে নেই , ওই আলো নিম্নবিত্তদের চোখে নেই। কিন্তু আপনি আলো দেখতে পারেন।ক্ষুধার জ্বালায় ওরা আলো দেখে না ওরা শুধু অন্ধকারই দেখে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিষেধাজ্ঞা ব্যাপারে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, আপনাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গুম খুন কমেছে কিন্তু গতকাল একটি অনলাইনে টকশোতে দেখলাম বিশেষজ্ঞরা বলছেন গুম খুন আবার বেড়ে গেছে এবং নির্বাচনের আগে আরো বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এটা কোন বিরোধী রাজনৈতিক দলের বক্তব্য নয় এটা দেশের বিশেষজ্ঞদের মত। এই যে ভয়াবহ আবাস দিচ্ছেন দেশের বিশেষজ্ঞরা বুদ্ধিজীবীরা। এটা শুনেই তো গোটা জাতির মধ্যে অন্ধকার তৈরি হয়েছে। আপনার এই পায়রা বন্দর দিয়ে জনগণের ভিতরে গুম-খুনের যে অন্ধকার সৃষ্টি হয়েছে তা কীভাবে দূর করবেন প্রধানমন্ত্রী।
সভাপতি অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন ঋজু, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম সহ বিএনপি নেতাকর্মী ও বিভিন্ন জেলার শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএইচ/এএস