দুদকের জালে সাবেক সেনাপ্রধানসহ ১০ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা

ছবি: সংগৃহীত
সরকার পরিবর্তনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করে জোরালো অভিযান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার সেই অভিযানের আওতায় এসেছে দেশের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের ১০ সাবেক কর্মকর্তা, যাদের বিরুদ্ধে ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং বিপুল অর্থপাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব এবং সম্পদ জব্দ করা হয়েছে, আবার অনেকের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।
অভিযুক্ত সামরিক কর্মকর্তাদের তালিকায় রয়েছেন:
১. জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান – তার বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে দুদকের চার সদস্যের কমিটি অনুসন্ধান চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার ভিসা বাতিল করেছে।
২. এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নান, সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান – রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব ও কয়েক কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।
৩. মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের, সাবেক এনএসআই মহাপরিচালক – তার বিরুদ্ধে চাকরিতে ঘুষ গ্রহণ, ভয়ভীতি দেখিয়ে সম্পদ অর্জন এবং লন্ডনে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
৪. মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক রাজউক চেয়ারম্যান – রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তার ও স্ত্রীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
৫. মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী, সাবেক সামরিক সচিব – জমি দখল করে পার্ক নির্মাণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগে তাকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্ত আছেন।
৬. মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান – আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তার ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশে বিদেশযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৭. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমান, সাবেক এসএসএফ ডিজি – তার বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। ইতোমধ্যে তার দুটি বাড়ি, ১০টি প্লট এবং ১৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।
৮. লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি – মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা রয়েছে। তিনি ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন।
৯. মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, সাবেক এনটিএমসি মহাপরিচালক – ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। বিদেশে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকার প্রমাণও মিলেছে।
১০. নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল – যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন, তার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে।
এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানিয়েছেন, "প্রত্যেকটি অভিযোগ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশনে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে এবং সেখান থেকেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
সাবেক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এভাবে দুর্নীতির অভিযোগের অনুসন্ধান দেশবাসীর মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। এটি প্রমাণ করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের অবস্থান সত্যিই কঠোর ও অগাধ প্রত্যয়পূর্ণ।
