শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন সি আর আবরার

উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন সি আর আবরার। ছবি: সংগৃহীত
আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যুক্ত হলেন অধ্যাপক সি আর আবরার। বুধবার (৫ মার্চ) বেলা ১১টায় বঙ্গভবনে শপথ নেন উপদেষ্টা পরিষদের এই নতুন সদস্য। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেন তিনি।
প্রথমে উপদেষ্টা হিসেবে এবং পরে গোপনীয়তার শপথ নেন সি আর আবরার। এরপর শপথ বইয়ে স্বাক্ষর করেন তিনি। উপদেষ্টা পরিষদের বেশ কয়েকজন সদস্য শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম জানান, বর্তমান শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ অনেক দিন ধরেই একই সঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকতে চাচ্ছিলেন না। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় অনেক বড় মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাঁকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখতে হচ্ছে। সে জন্য সি আর আবরার উপদেষ্টা পরিষদে আসছেন।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। কয়েক দফায় নতুন কয়েকজন উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ২২ জন। সি আর আবরার যোগ হলে এই সংখ্যাটি হবে ২৩।
এর মধ্যে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক হয়েছেন। নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
অধ্যাপক সি আর আবরার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্পন্ন করেছেন পিএইচডি।
পেশাগত জীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন সি আর আবরার। পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানি নাগরিক (বিহারি), রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বহু দিন ধরে ব্যাপক পরিসরে কাজ করেছেন অধ্যাপক আবরার। নিপীড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বৈশ্বিক শক্তিগুলোর অভিন্ন অবস্থানের কঠোর সমালোচক এই অধ্যাপক।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম–খুন, নিপীড়নমূলক ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বিরুদ্ধেও সরব ছিলেন সি আর আবরার। সবশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং গণমাধ্যমের প্রপাগান্ডামূলক ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি।
শরণার্থী ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সি আর আবরারের জন্ম ১৯৫২ সালের ১৭ আগস্ট ফরিদপুরে। তাঁর পিতা আবদুস সাত্তার চৌধুরী ও মা সোফিয়া সুলতানা।
তিনি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেন।
এরপর যুক্তরাজ্যের সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এমএ এবং অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি।
১৯৭৯ সাল থেকে টানা চার দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এই অধ্যাপক শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক।
দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন তিনি। তাঁর গবেষণার বিষয় রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্বল্পমেয়াদি শ্রম অভিবাসী এবং বাংলাদেশে ক্যাম্পে বসবাসকারী উর্দুভাষী সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব।
তিনি শ্রম নিয়োগ শিল্প, সামাজিক সুরক্ষা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন। সি আর আবরারের লেখা দেশ–বিদেশের বিভিন্ন সংবাদপত্র ও জার্নালে প্রকাশ হয়েছে। ওয়েস্ট ভিউ প্রেস, ম্যাকমিলান ইন্ডিয়া, আর্থস্ক্যানের বিভিন্ন সংকলনে তাঁর নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
সি আর আবরার আবরার উর্দু ভাষাভাষী তরুণদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য ক্যাম্প সংগঠিত করার ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন।
