প্রধান উপদেষ্টার উদ্বোধনে শুরু হচ্ছে একুশে বইমেলা
প্রধান উপদেষ্টার উদ্বোধনে শুরু হচ্ছে একুশে বইমেলা। ছবি: সংগৃহীত
আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাচ্ছে বাঙালির প্রাণের উৎসব অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ । এবারের বইমেলার প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। বইমেলার উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলা একাডেমির আব্দুল করীম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন। তিনি বলেন, ‘ভাষাশহীদ, ভাষাসংগ্রামী, মুক্তিযুদ্ধ, গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারী সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা।’
এবারের বইমেলার বিন্যাস গত বছরের মতোই থাকছে, তবে আঙ্গিকগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। মেট্রোরেলের অবস্থানের কারণে গতবারের বাহিরপথ এবার মন্দির গেটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। মেলায় চারটি প্রবেশ ও বাহিরপথ থাকবে- টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের পাশে। খাবারের স্টলগুলো এবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের সীমানা ঘেঁষে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে। এছাড়া নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাগুলো আগের মতোই থাকবে।
শিশুদের জন্য বড় পরিসরে শিশু চত্বর তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তারা অবাধে বিচরণ করতে পারবে এবং সহজেই পছন্দের বই সংগ্রহ করতে পারবে। বাংলা একাডেমি ও অংশগ্রহণকারী প্রকাশনী সংস্থাগুলো বইয়ের ওপর ২৫ শতাংশ ছাড় দেবে। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। এছাড়া শিশু-কিশোরদের জন্য চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে বসানো হয়েছে তিন শতাধিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা। মেলাপ্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখা হবে। পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত রাখতে মেলায় কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে প্রতিদিন পানি ছিটানো ও মশক নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবারের বইমেলাকে পরিবেশবান্ধব করতে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। স্টল, মঞ্চ, ব্যানার, লিফলেট, ফাস্ট ফুড দোকান ও অন্যান্য জায়গায় পরিবেশবান্ধব উপকরণ যেমন- পাট, কাপড় ও কাগজ ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে গুণগতমান বিচারে সেরা প্রকাশনাকে ‘চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে। শৈল্পিক বিবেচনায় তিনটি প্রকাশনাকে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। এছাড়া শিশুতোষ গ্রন্থের জন্য ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং সেরা স্টলের জন্য ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ দেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি এবারের বইমেলায় নতুন ৪৩টি বই এবং পুনর্মুদ্রিত ৪১টি বই প্রকাশ করবে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বইমেলা খোলা থাকবে। ছুটির দিনে মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা চলবে।
এবারের বইমেলায় ৭০৮টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, যেখানে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ১৯৯টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৬০৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মোট ইউনিট সংখ্যা ১,৮৪৮টি। এছাড়া ৩৭টি প্যাভিলিয়ন, ১৩০টি লিটল ম্যাগাজিন স্টল এবং ৭৪টি শিশু চত্বর স্টল থাকছে।
সাহিত্যপ্রেমীদের জন্য এবারও বইমেলা হয়ে উঠবে জ্ঞান ও সৃজনশীলতার এক মহামঞ্চ। নতুন ও পুরোনো বইয়ের সমারোহ, সাংস্কৃতিক আয়োজন ও পাঠকের উপস্থিতিতে মুখরিত হবে পুরো বইমেলা প্রাঙ্গণ।