১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা
অন্তর্বর্তী সরকারকে যেসব প্রস্তাবনা দিতে যাচ্ছে সংবিধান সংস্কার কমিশন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। ছবি: সংগৃহীত
সংবিধান সংস্কার কমিশন চলতি মাসের মাঝামাঝি তাদের প্রস্তাবনা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কমিশনটি ১২০টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারের একটি প্রস্তাবনা প্রণয়ন করেছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই এই প্রস্তাবনার মূল লক্ষ্য।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:
* প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদ পৃথকীকরণ।
* একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, তবে এটি টানা দুইবার হবে নাকি মোট দুইবার, সে বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
* রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং রাষ্ট্রপতিকে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত করার প্রস্তাব।
* এককেন্দ্রিক ক্ষমতা রোধে সংসদকে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট করার সুপারিশ।
* সংসদ সদস্যদের দলের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেওয়া, তবে সংসদ গঠন বা ভাঙার ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না।
* স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাব।
* সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বয়সসীমা ২৫ থেকে কমিয়ে ২১ করার প্রস্তাব।
* ৭০ অনুচ্ছেদসহ বিতর্কিত ধারাগুলো সংশোধন বা বাতিল।
* সংবিধানের অনুচ্ছেদগুলো থেকে জাতির পিতার পরিবারের সুরক্ষাসংক্রান্ত বিশেষ অনুচ্ছেদ বাদ দেওয়ার প্রস্তাব।
* ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সংক্রান্ত ধারা আন্তর্জাতিক সংবিধানের আলোকে পুনর্বিবেচনা।
স্বাধীনতার পর থেকে ক্ষমতাসীন দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সংবিধানকে ব্যবহার করেছে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বৈধ করা থেকে শুরু করে সামরিক শাসনের ভিত্তি রচনা, সবই সংবিধানের মাধ্যমে করা হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পঞ্চদশ সংশোধনীসহ বেশ কিছু বিতর্কিত পরিবর্তন আনা হয়, যা গণতন্ত্র ও জনগণের অংশগ্রহণ সীমিত করেছে।
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর তৎকালীন সরকার পতন হয়। এর ধারাবাহিকতায় নতুন সরকার সংবিধান সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। ৬ অক্টোবর গঠিত হয় সংবিধান সংস্কার কমিশন। তারা তিন মাস ধরে বিভিন্ন পক্ষের মতামত নিয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে।
বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ আহসানুল করিম প্রস্তাবনাগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে তিনি মনে করেন, এই সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক ঐক্যের প্রয়োজন। তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে জনগণের কথা মাথায় রেখে একমত হতে হবে। তবেই ভবিষ্যতে যেকোনো সরকার এ সংস্কারের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে।”
চূড়ান্ত সংস্কার প্রস্তাবনা তৈরির আগে সব অংশীজনের মতামত নেওয়া হবে। কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য সংবিধানকে এমনভাবে সংস্কার করা, যা জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে এবং গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করবে।”
এই সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন হলে তা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে বলে বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করছেন।