ছাত্রদের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা পেছানোর কারণ যা জানা গেল
ছবি: সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র নিয়ে মতবিরোধ এবং রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে ঘোষণা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নেন যে, ঘোষণাপত্র জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে হতে হবে। এ নিয়ে উপদেষ্টাদের মধ্যেও বিরোধ দেখা দেয়।
বিরোধের মূলে কী ছিল?
১. রাজনৈতিক সমন্বয়ের অভাব: প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের মতে, জাতীয় ঐকমত্য ছাড়া কোনো ঘোষণা দেওয়া উচিত নয়। তিনি ছাত্রনেতাদের সতর্ক করে দেন যে, এককভাবে ঘোষণা দিলে তিনি সরকারের সঙ্গে থাকতে পারবেন না।
২. আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় পর্যায়ের উদ্বেগ:
- ছাত্রদের একক ঘোষণার ফলে রাজনৈতিক বিভাজন এবং বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দেয়।
- লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গেও ছাত্রনেতাদের আলোচনা হয়।
৩. সরকার ও উপদেষ্টাদের মতবিরোধ:
- আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ঘোষণাপত্রের বিরোধিতা করেন।
- ছাত্রউপদেষ্টাদের মধ্যে পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
গত সোমবার গভীর রাতে দফায় দফায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হবে। ছাত্ররা আপাতত ঘোষণাপত্র প্রকাশ থেকে সরে এসে কর্মসূচি স্থগিত সিদ্ধান্ত নেয়।
বিরোধী মতামত এবং প্রতিক্রিয়া
১. ছাত্র আন্দোলনের ভেতর দ্বিধা:
- একটি অংশ মনে করে, কর্মসূচি স্থগিত করা আন্দোলনের দুর্বলতা প্রকাশ করে।
- তাদের দাবি, সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করলে ছাত্র আন্দোলনের স্বাতন্ত্র্য হারাবে।
২. বিএনপির অবস্থান:
- বিএনপি মনে করে, ছাত্রদের এই একক উদ্যোগ রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
- দলটির মতে, ছাত্র আন্দোলনের দাবি অরাজকতা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩. অন্যান্য রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
- জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবির এই কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে কোনো ভূমিকা নেয়নি।
- সরকার সমন্বিত ঘোষণার উদ্যোগ নিয়ে অস্থিতিশীলতা রোধের চেষ্টা করেছে।
শেষ পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন “মার্চ ফর ইউনিটি” নামে কর্মসূচি ঘোষণা করে। এতে জনগণের ঐক্য এবং সংস্কারমূলক দাবির প্রতি জোর দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, ঘোষণাপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের সংবিধান সংশোধনের দাবি জানানো হবে। তবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের অবস্থান বিবেচনা করে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই।
ছাত্রদের ঘোষণাপত্র আপাতত স্থগিত থাকলেও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণা তৈরির প্রক্রিয়া তাদের দাবি বাস্তবায়নের সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে। তবে সরকার ও ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে কিভাবে এটি কার্যকর হবে, তা দেখার বিষয়।